বিনোদন

আরএফএল প্লাস্টিকসের প্রশংসায় ড. মাহফুজুর রহমান

বাংলা নাটকের সুদিন আর নেই। আছে ভালো গল্পের অভাব, নির্মাণেও দেখা যায় দুর্বলতা। অভিনয়েও শিল্পীদের খুব একটা প্রাণবন্ত দেখা যায়। নানা অভিযোগ রয়েছে বাংলা নাটকের দর্শকপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে।

Advertisement

তবে সব অভিযোগের সমাধান আটকে যায় বাজেটের সামনে গিয়ে। বাজেটের অভাবেই ভালো গল্পের জোগার করতে পারেন না পরিচালক। বাজেটের অভাবে ইচ্ছে মতো লোকেশনে শুটিং করা যায় না। ইচ্ছে মতো চরিত্র রাখা যায় না।

বাজেটের অভাবে অনেক সময় বদলে যায় নাটকের গল্পও। নির্মাণেও থেকে যায় নানারকম ত্রুটি। বাজেটের অভাবে শিল্পীরাও সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেন না। চারদিনের কাজ নেমে যায় দেড়-দুই দিনে। আর সেই বাজেটের অভাবের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞাপনের বাজেট স্বল্পতা। 

এমনি সময়ে নাটকের বাজেটকে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আরএফএল প্লাস্টিকস। সম্প্রতি ‘সময় অসময়ের গল্প’ স্লোগান নিয়ে এটিএন বাংলায় শুরু হয়েছে এক ঘণ্টার নাটকের একটি সাপ্তাহিক আয়োজন।

Advertisement

বিইউ শুভ’র নেতৃত্বে এখানে তরুণ নির্মাতারা নাটক বানাবেন। সোনালী দিনের নাটকগুলোর মতো থাকবে চরিত্রের আধিক্য, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সম্প্রীতি। এই আয়োজনটি নিবেদন করছে আরএফএল প্লাস্টিকস।

গতকাল এই আয়োজন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্পন্সর আরএফএল প্লাস্টিকসে ধন্যবাদ জানিয়ে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘অতি আনন্দের সঙ্গে বলতে হয় চারদিকে যখন বিজ্ঞাপনের বাজেট কমে যাওয়ায় নাটক নির্মাণে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে তখন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বড় মনের পরিচয় দিয়ে এগিয়ে এসেছে।

বিশেষ করে আরএফএল প্লাস্টিকসের হেড অব মার্কেটিং আরাফাতুর রহমানকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি যে বাজেট দিয়ে নাটক নির্মাণে সহযোগিতা করছেন তা এই বাজারে নির্মাতাদের জন্য আশীর্বাদের মতো। ভালো নাটক বানানো গেলে সেগুলো দর্শকপ্রিয় হবেই। আর নাটক যদি দর্শকপ্রিয় হয় তবে লাভ চ্যানেল, পরিচালক ও প্রযোজক সবার জন্যই।’

তিনি বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনী সংস্থার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘একসময় তারা ভালো বাজেট দিতো। কিন্তু নানা কারণে তারা এখন একটি ধারাবাহিকের পর্বের জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকার বেশি দিতে চায় না। আপনারাই বলুন, যেখানে ভারত একটি পর্বে ৫ লাখ টাকা খরচ করছে সেখানে আমাদের নির্মাতারা পাচ্ছে এক লাখেরও কম বাজেট। তিনি সেটা দিয়ে বাধ্য হয়েই দুটি চরিত্র নিয়ে গ্রামের ভাঙা ঘরে গিয়ে নাটক বানাচ্ছেন।

Advertisement

আমিই এই দেশে প্রথম ব্যক্তি উদ্যোগে বেসরকারি টিভি চ্যানেল চালু করি। টানা দুই বছর কোটি কোটি টাকা আমি এখানে লস দিয়ে চ্যানেল চালিয়েছি। আমাকে দেখে অনেক ধনকুবের ও শিল্প প্রতিষ্ঠান চ্যানেল নিয়ে এসেছিলেন। তারা দুই তিন মাসের মধ্যেই চ্যানেল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আল্লাহর রহমতে আমি কিন্তু চালিয়ে গেছে।

যেহেতু তখন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ধারনাটি নতুন তাই বিজ্ঞাপন আসতো না। দুই বছর পর আমার পাশে দাঁড়ান আকিজ গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এই দেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার পেছনে এই কোম্পানিগুলোর অবদান স্বীকার করতেই হবে।

কিন্তু আজ চ্যানেল এতই বেড়ে গিয়েছে যে বাজেট নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, স্বজন-বন্ধুপ্রীতিতে আক্রান্ত হচ্ছে নাটক-অনুষ্ঠানের বাজেট। ফলে চ্যানেলগুলোর অবস্থা খুব করুণ। সেদিক থেকে আরএফএল প্লাস্টিকস যে বাজেট দিচ্ছে তা এই বাজারে বিশাল। আমি আশা করি এই আয়োজনটি সফল হবে।

অন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও নাটকের বাজেট বাড়াতে উৎসাহিত হবেন। পাশাপাশি বিইউ শুভ ও তার সঙ্গে থাকা নতুন নির্মাতাদের আমি অনুরোধ করবো আকালের বাজারে একটা ভালো সুযোগ আপনারা পেয়েছেন। সেটাকে কাজে লাগান।’

‘সময় অসময়ের গল্প’ আয়োজনে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে আরএফএল প্লাস্টিকসের হেড অব মার্কেটিং আরাফাতুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই নাটকে পরিবর্তন আসুক। এখন হিরোরা কমেডিয়ান হয়ে যাচ্ছে, ভিলেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একজন হিরো কিন্তু সমাজের আইকন। বাজেটের অভাবে একজনের জনপ্রিয়তাকেই নানাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে নাটকের চরিত্রে বৈচিত্রতা হারাচ্ছে।

সেইসঙ্গে নাটকে পরিবারের যে বন্ধন ছিলো, সম্প্রীতির চমৎকার প্রচার ছিল আশি নব্বই দশকে সেটাও আর নেই। বাজেটের অভাবে পরিচালকরা শর্টকাটে নাটক বানাচ্ছেন। এইসব বিবেচনা করেই আমরা এই আয়োজনটি নিয়ে এসেছি। বিশ্বাস করি নির্মাতারা আমাদের স্বপ্নকে, চ্যানেল ও দর্শকের প্রত্যাশাকে হতাশ করবেন না। ভালো কাজের সঙ্গে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সবসময়ই ছিল এবং থাকবে।’

ওই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তাশিক রহমান, অভিনেতা পীরজাদা হারুন, নির্মাতা বিইউ শুভ, সাখাওয়াত হোসেন মানিক, রাইসুল তমাল, স্বাধীন ফুয়াদ প্রমুখ।

নির্মাতা বিইউ শুভ বলেন, ‘সময় অসময়ের গল্প’ স্লোগানে প্রতি শুক্রবার রাত ৯টায় প্রচার হচ্ছে এক ঘণ্টার নাটক। এসব নাটকে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীরা অভিনয় করছেন।

এলএ/এমএস