ঢাকা মহানগরে অপরাধ দমনে শক্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে পুলিশ। এজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের ১৬টি ক্রাইমজোন ভেঙে ২৪টি জোন করা হচ্ছে। দু’টি থানা মিলে একটি ক্রাইমজোন করা হবে। এছাড়া সম্প্রতি সরকার দলীয় সংগঠনের অন্তর্কোন্দলকে ঘিরে খুন ও নাশকতার ঘটনা এড়াতে তথ্য সংগ্রহ করবে পুলিশ। তাছাড়ায় থানায় নতুন একটি পদও তৈরি করা হচ্ছে।মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরে মাসিক সাধারণ সভায় (জুলাই মাস) এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। অপরাধবিষয়ক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি সদর দফতরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছে মহানগর পুলিশ। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিতে ডিএমপির কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে।মঙ্গলবারের ওই সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অপরাধবিষয়ক আলোচনা ছাড়াও অন্যান্য সব বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির আট বিভাগের ১৬টি ক্রাইমজোন ভেঙে ২৪টি জোন করা হবে। দু`টি থানা মিলিয়ে এক একটি করে ক্রাইমজোন হবে। জোনে ছোটছোট তিনটি থানাও থাকবে। একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিটওয়ারি (বিষয়/ক্ষেত্র) পুলিশকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা এসেছে ওই সভা থেকে।সূত্রমতে, ডিএমপির প্রতিটি থানায় ‘পরিদর্শক- অ্যাডমিন ও অপারেশন’ নামে নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এছাড়া প্রতি থানায় ওসিসহ তিনজন পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করবেন। অপরাধ কমিয়ে আনতে প্রতিটি থানাকে এ বি ও সি ক্যাটাগরিতে বিভক্তেরও সিদ্ধান্ত হয়। ক্যাটাগরি অনুযায়ী কাজের গতি বাড়াতে উপস্থিত কর্মকর্তারা জনবল বৃদ্ধির অনুরোধ জানান। এ জন্য সাত হাজার ১৫১ জন পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়।খুব দ্র্রুত এসব জনবল থানাগুলোকে ভাগ করে দেয়া হবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। সূত্রটি আরো জানায়, ডিএমপি নিয়ন্ত্রিত থানাগুলোতে নিরাপত্তাহীনতাজনিত কারণে কোনো ব্যক্তি মামলা অথবা জিডি করতে এলে তা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।সম্প্রতি ব্লগারসহ কয়েকজন ব্যক্তির নিরাপত্তাহীনতাজনিত বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেয়ায় কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শুধু তাই নয় নিরাপত্তাজনিত জিডি গ্রহণ করা হয়নি এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত হবে এবং প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটামও দেন তিনি। কমিশনার সভায় আগত বিভিন্ন থানার ওসি ও ডিসি এসিদের কাছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের অগ্রগতির সার্বিক খোঁজখবর নেন। তিনি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সমালোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে সব মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানানোর জোর তাগিদ দেন।ডিএমপি সদর দফতরের ওই সূত্রটি জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তর্কোন্দল সম্প্রতি বেড়েছে। এসব বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। সভায় বলা হয়, দলীয় কোন্দলের বিষয়ে পুলিশের কাছে আগাম তথ্য থাকলে হত্যাকাণ্ডগুলো ঠেকানো যেতো। দ্বন্দ্ব নিরসনে স্থানীয় নেতারা ব্যর্থ হলে পুলিশকে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেও জোরারোপ করেন।বিতর্কিত লোকদের থানায় ঢুকতে না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। থানায় দালাল শ্রেণির কোনো মানুষকে ঢুকতে না দেয়া ও ভালো মানুষের যাতায়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।এছাড়া সভায় তেজগাঁও বিভাগকে জোন বড় করে ওয়ারি বিভাগকে ছোট করারও বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের সেবা বৃদ্ধির জন্য দারুস সালাম থানাকে তেজগাঁও বিভাগে সংযুক্ত করা হবে। অন্যদিকে ডেমরা থানাকে ওয়ারি থেকে বের করে লালবাগ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়।এব্যাপারে ডিএমপি এক যুগ্ম কমিশনার নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ডিএমপি এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে এবারের সভায় অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে যা অচিরেই বাস্তবায়ন হবে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাগরিক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। ডিএমপির পরিবর্তনে নাগরিকদের সুফলকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।জেইউ/বিএ
Advertisement