বর্তমান সময়ে একটা বিষয় বেশ খেয়াল করার মতো। আপনার চারপাশের অনেকেই মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে চাইছেন কিম্বা খাবারের তালিকা থেকে এই মাংসকে একেবারেই ছেঁটে ফেলতে চাইছেন। খাবারের তালিকা থেকে মাংস বাদ দেয়া এসব লোকের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
Advertisement
যেসব কারণে অনেকেই মাংস খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর জীবন। তাছাড়া অনেকেই আবার খাবারের তালিকা থেকে মাংসকে বাদ দিচ্ছেন পরিবেশ রক্ষা আর পশুপাখির জীবনের কথা ভেবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি তিনজনের একজন অঙ্গীকার করছেন যে তারা মাংস খাওয়া একেবারেই বাদ দিয়েছেন কিংবা কমিয়ে দিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সংখ্যা প্রতি তিনজনে দুইজন।
সম্প্রতি সারা বিশ্বে মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়ার জন্য একটি প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রত্যেক সোমবারকে বিবেচনা করা হচ্ছে মাংসমুক্ত দিবস হিসেবে। অন্তত এই দিনটিতে যেন কেউ মাংস কিংবা যেকোনো ধরনের প্রাণীজাত খাদ্য পরিহার করেন তার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাছাড়া গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংস্থা কম মাংস খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরছে মানুষের সামনে।
Advertisement
তবে বাস্তবে এর কোন প্রভাব পড়ছে কিনা সেটাও পশ্নেসাপেক্ষ। কেননা গত ৫০ বছরে গোটা বিশ্বে মাংস খাওয়ার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬০ এর দশকে যতো মাংস উৎপাদন করা হতো বর্তমানে তার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ষাটের দশকে সাত কোটি টন মাংস উৎপাদিত হতো কিন্তু ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ কোটি টন।
বর্তমানের এই অবস্থার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাদের খাওয়ার যোগান দিতেই মাংসের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। এই একই সময় ধরে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ১৯৬০ এর দশকে মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় তিনশো কোটি কিন্তু এখন এই সংখ্যা সাড়ে সাতশো কোটিরও বেশি।
গোটা বিশ্বে মাংসা খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে ২০১৩ সালের হিসেবই সর্বশেষ। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর কোন দেশে কতো মাংস খাওয়া হয় সেই তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। তারপরেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। এই দুটো দেশে একজন ব্যক্তি বছরে ১০০ কেজির বেশি মাংস খায়, যা প্রায় ৫০টি মুরগি কিম্বা একটি গরুর অর্ধেকের সমান।
Advertisement
অবশ্য মাংস খাওয়ার এই উচ্চ হার চোখে পড়বে পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশেই। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে একজন মানুষ বছরে ৮০ থেকে ৯০ কেজি মাংস খেয়ে থাকেন। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র পাওয়া যাবে গরিব দেশগুলোতে। সেসব দেশের লোকজনের মাংস খাওয়ার পরিমাণ খুবই কম।
ইথিওপিয়ায় একজন মানুষ বছরে গড়ে প্রায় সাত কেজি, রুয়ান্ডায় আট কেজি এবং নাইজেরিয়াতে ৯ কেজির মতো মাংস খেয়ে থাকেন। ইউরোপের একজন নাগরিক গড়ে যতো মাংস খান এসব দেশের মানুষের মাংস খাওয়ার পরিমাণ তার দশগুণ কম। তবে নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ দেশগুলোতেই মাংস এখনও একটি বিলাসবহুল খাদ্য।
সূত্র : বিবিসি
এসএ/এমএস