কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা বেগম নিয়মিত বিদ্যালয়ে না গিয়ে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
Advertisement
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, আনোয়ারা বেগমের স্বামী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সেই সুবাদে স্বামীর কর্মস্থলের পাশেই থাকেন তিনি। মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন তিনি।
জানা যায়, খোঁচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক আছেন, যারা মাসে ১২ হাজার টাকা নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। হাফিজুর রহমান নামে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
তবে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আনোয়ারা ম্যাডাম বহু দিন থেকে স্কুলে আসেন না। আমাদের ক্লাসও নেন না। তিনি কোথায় আছেন আমরা জানি না।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনোয়ারা বেগম ২০০০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০১ সালের ২৫ মার্চ খোঁচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি।
এরই মধ্যে তার স্বামীর প্রথম শ্রেণির চাকরি হলে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে বিদ্যালয়ে আসেননি আনোয়ারা বেগম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের স্বজনরা বিদ্যালয়ে ঠিকমতো না যাওয়ার বিষয়ে অনেক অভিযোগ আসলেও প্রভাবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে খোঁচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের সাতটি পদের মধ্যে চারজন এবং ডেপুটেশনে আছেন একজন শিক্ষক। তবে বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
Advertisement
সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা বেগমের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ বলেন, দরখাস্ত দিয়ে ছুটি নিয়েছেন আনোয়ারা বেগম। পরে ফোন আসার কথা বলে বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। আমি রংপুরে অবস্থান করছি। প্রধান শিক্ষককের কাছ থেকে মোবাইলে তিন দিনের ছুটি নিয়েছি। চাকরি করব কী করব না এ বিষয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করতে এখানে এসেছি।
এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টিএমএ মোমিন বলেন, আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আমার স্ত্রী ইতোমধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় চন্দ্র সরকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
তবে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএইচএম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাজমুল/এএম/এমএস