প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য কুইন্সল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বাড়িঘর, স্কুল ও বিমানবন্দর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রাস্তাগুলো যেন পরিণত হয়েছে নদীতে। কুমির ও সাপ চলে এসেছে রাস্তায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী।
Advertisement
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে বলা হচ্ছে, ভয়াবহ এই বন্যায় কুইন্সল্যান্ডের মানুষের জীবন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। ভয়াবহ এই বন্যাকে ‘ওয়ান্স ইন এ সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীতে একবার বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। নদী-খাল-বিলে থাকা সাপ আর কুমির রাস্তায় উঠে এসেছে। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে, সেনাসদস্য নামাতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
সেনাসদস্যরা উপদ্রুত এলাকায় হাজার হাজার বালুর ব্যাগ সরবরাহ করছেন। উভচর যান ব্যবহার করে বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। তাছাড়া কার্গো গাড়ি, ফ্লাশলাইটসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে কুমিরদের বন্দি করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের পর রোববার সেখানকার একটি বাঁধের দরজা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়া হলে এ বন্যা শুরু হয়। তুমুল বৃষ্টিপাতে রাজ্যের রোস নদীর পানির উচ্চতা বাঁধের ধারণক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাওয়ায় ফটকগুলো খুলে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের টাউন্সভিল শহরে নজিরবিহীন বন্যার কবলে পড়া হাজার হাজার মানুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে টানা বর্ষণের ফলে রোজ নদীর বাঁধ পানি ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাঁধের সব দরজা খুলে দেয়া হয়। কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই বন্যার কবলে পড়ে ২০ হাজার ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া ব্যুরোর পক্ষ থেকে দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, ‘নিয়মিত বিরতিতে খুব দ্রুতই এ পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই জরুরি সেবা ও পূর্বাভাস পেতে সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা আপনাদেরকে হালনাগাদ তথ্য ও পরামর্শ দেব।
আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, বাঁধ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ১ হাজার ৯০০ কিউবিক মিটার পানি আসছে শহরে। যা মারাত্মক বিপদের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। গত এক সপ্তাহে শহরটিতে এক মিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা ভেঙ্গে ফেলেছে আগের সব রেকর্ডকে।
Advertisement
অস্ট্রেলিয়ার এ অংশে টানা বর্ষণের দেখ মিললেও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিশাল অঞ্চল আছে ভয়াবহ খরার কবলে। রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারিকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ‘উষ্ণতম মাস’ বলা হচ্ছে। একমাসের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অ্যাডিলেডে দুইবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে।
এসএ/এমএস