বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন এখনো অনেক দেরি। চলতি কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আরও চার মাস বাকি। এরইমধ্যে আলোচনায় শিল্পী সমিতির নির্বাচন। নানা কারণে, নানা ইস্যুতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের আগ্রহে রয়েছে তারকাখচিত সমিতিটি।
Advertisement
তবে আলোচনার মূলে রয়েছে বর্তমান কমিটির অভ্যন্তরে গুমোট হাওয়া। নানা কারণে বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে হঠাৎ করেই জাতীয় রাজনীতিতে সমিতির কয়েকজন নেতার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার হিংসা।
সেইসঙ্গে একজন প্রযোজকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেও তার সঙ্গে সম্প্রতি ছবি তোলা। যা ফেসবুকে ছড়ানোর পর নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যা জবাবদিহিতাকে অপমান সূচক বলে মনে করেছেন সিনিয়র শিল্পীরা।
এমনি আরও কিছু আভ্যন্তরীন কারণ অনেক সিনিয়র নেতা-নেত্রী নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন সমিতির কার্যক্রম থেকে। সদ্য শেষ হওয়া শিল্পী সমিতির বনভোজনের সাদামাটা চিত্র ও শিল্পীদের উপস্থিতি যেন তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
Advertisement
বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন চিত্রনায়ক ফারুক। সেই তিনি প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়ে যেদিন প্রথমবার সংসদে অধিবেশনে যোগ দিলেন সেদিনই বনভোজনে গিয়েছে শিল্পী সমিতি।
এই বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না কেউই। নায়ক ফারুকের সঙ্গে সমিতির বর্তমান কমিটির অনেকের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কেন সেই দূরত্ব তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও এই দূরত্বেই শিল্পী সমিতিতে জেগেছে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা।
শোনা যাচ্ছে, বর্তমান কমিটিতে থাকা মিশা-জায়েদ প্যানেলে ভরসা করতে পারছেন না বেশিরভাগ নেতা-কর্মী। এই নেতৃত্বের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়েও তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। যার ফলে বর্তমান প্যানেল ভেঙ্গে গঠিত হতে পারে দুটি প্যানেল। একটি প্যানেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন রিয়াজ, ফেরদৌস, পপি, নিপুণরা।
আর তাদের পরামর্শক হিসেবে থাকবেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ফারুক, আলমগীর, কবরী, ববিতাসহ আরও অনেক সিনিয়ররা।
Advertisement
প্যানেলে নেতৃত্ব নিয়ে সামনে ওঠে আসবেন নতুন প্রজন্মের কয়েকজন তারকা। যারা দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের আভ্যন্তরীন জনপ্রিয়তাতেও রয়েছেন এগিয়ে। বিস্তারিত জানতে অপেক্ষা করতে হবে চলতি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত।
শিল্পী সমিতির সহসভাপতি রিয়াজ নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি। তাই সে নিয়ে আপাতত ভাবছি না, কিছু বলতেও চাই না। সময় এলেই সব প্রকাশ হবে। তবে আমি সিনেমা ও শিল্পীদের জন্য সবসময় নিবেদিত থাকবো।’
এদিকে আসছে নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকা কমিটির বাইরে থেকেও দেখা যেতে পারে একটি প্যানেল। যার সভাপতি হিসেবে ওঠে আসছে চিত্রনায়ক শাকিব খানের নাম। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হবেন অভিনেতা-প্রযোজক ডি এ তায়েব।
সূত্র বলছে, এই প্যানেল নিয়ে বেশ ভালোই আলোচনা এখন এফডিসি পাড়ায়। মিশা-জায়েদ প্যানেলের প্রতিপক্ষ হিসেবে শাকিব-তায়েবকে ঘিরে এরইমধ্যে প্যানেলের জন্য নেতা বাছাই চলছে। বর্তমান কমিটিতে থাকা অনেক নেতাকেও নতুন এই প্যানেলে দেখা যেতে পারে বলে খবর উড়ছে।
শাকিব-তায়েবের প্যানেলের বাইরে ওমর সানি ও অমিত হাসানের একটি প্যানেল নিয়েও আলোচনা শোনা যায়। সেখানে দেখা মিলতে পারে চিত্রনায়িকা মৌসুমী, বাপ্পারাজ, নাদের চৌধুরীসহ জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘেঁষা অনেক তারকা শিল্পীদের।
তবে অনেকেই মনে করেন বর্তমান কমিটির যে নেতৃত্ব তাদের হাত ধরে শিল্পী সমিতির চেহারায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। আনাগোনা বেড়েছে শিল্পী ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের। শিল্পীরাও সরাসরি নেতাদের কাছে দুঃখ জানাতে পারছেন। পাচ্ছেন অনেক সুবিধাদি। তাই তাদের জনপ্রিয়তাও নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। সবমিলিয়ে সময় যতো গড়াচ্ছে ততোই রহস্যময় হয়ে উঠছে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের চেহারা। রহস্যময় হয়ে উঠছেন শিল্পী সমিতির নেতারাও। রাজনীতি যেন একেবারে মাকড়শার জালের মতোই বিস্তার করে আছে সংগঠনটিতে। সবাই অপেক্ষা করছেন বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য।
দাবার চালে কোন গুটি কোথায় গিয়ে পড়ে বলা মুশকিল। তবে চলচ্চিত্র শিল্পীদের উন্নয়নে ও সিনেমা বান্ধব একটি তারকাখচিত, সুসংগঠিত, রুচিশীল, সম্প্রীতিপ্রিয় নেতৃত্বই যেন ক্ষমতায় আসে সে প্রত্যাশা করছেন সাধারণ শিল্পীরা। তারা ফুলের তোড়া নয়, ক্ষমতার দাপট আর গাল ভরা বুলি নয়, নিয়মিত কাজ চান। অভিনয় করে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চান।
এলএ/আরআইপি