রাজনীতি

মূল্যায়ন প্রত্যাশী রাজপথে নির্যাতিতরা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে তখন। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম আর নির্যাতন সহ্য করেই টিক থাকতে হয়েছে নেতাকর্মীদের। সেই দুর্দিনে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড ছাত্রলীগ রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এমন সব সাবেক নারী নেত্রীরা দলে মূল্যায়ন চান।

Advertisement

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কখনো রাজপথের মিছিলে স্লোগান, কখনো পুলিশি নির্যাতন আবার কখনো কারাবরণ করতে হয়েছে। তবুও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে মঠে ছিলেন সেসব নারী সদস্যরা।

নারী নেত্রীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ১০ বছর পর এবার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে মূল্যায়ন প্রত্যাশী তারা। সংগ্রহ করেছেন দলীয় মনোনয়ন। এবার প্রত্যাশা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।

প্রত্যাশা করছেন,পরীক্ষিত, দীর্ঘদিন রাজনীতি করা, যাদের পারিবারিক ভিত্তি আছে এবং শিক্ষিত এদেরকেই দল মূল্যায়ন করবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকেই মূল্যায়ন করবে এটাই তাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা।

Advertisement

দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরাও বলছেন ‌‌ত্যাগী ও পরিচ্ছন্নদের মূল্যায়ন করা হবে। তবুও চাপা অস্বস্তি চলছে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীদের মাঝে। কেউ কেউ হতাশা ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।  

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেসমীন শামীমা নিঝুম। জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ছাত্র সংসদে ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা আহত হন। ওয়ান-ইলেভেন সেনা সমর্থিত সরকারের সময় কারাবন্দী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিঝুম।

তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি। বর্তমানেও সততা, নিষ্ঠার সঙ্গেই সংগঠন করছি। সংগঠন করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা যায় না। জাতীয় সংসদে সারা দেশের মানুষের জন্য কথা বলার সুযোগ থাকে। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী যোগ্য মনে করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে সারা দেশের মানুষ ও নারীদের জন্য কাজ করতে চাই।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রোজিনা নাছরীন রোজী। আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থেকেছেন বিভিন্ন সময়েই। বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষিত, দীর্ঘ দিন রাজনীতি করা, যাদের পারিবারিক ভিত্তি আছে আওয়ামী লীগ করার এবং শিক্ষিত এদেরকেই দল মূল্যায়ন করবে এটাই প্রত্যাশা। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকেই মূল্যায়ন করবে এটাই বিশ্বাস ও প্রত্যাশা।’

এ তালিকায় রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও বর্তমানে যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি কেশোয়ারা সুলতানা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালি, বদরুন্নেছা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসরিন সুলতানা ঝরা, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেদ্দা পারভীন খান রিমি ও একই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি নুরজাহান আক্তার সবুজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরীন সুলতানা।

মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শারমীন সুলতানা লিলি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

শারমীন সুলতানা লিলি বলেন, তৃণমূল থেকে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করে এসেছি। ছাত্রলীগের কর্মী থাকাকালীন বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর নেত্রীর নেতৃত্বে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি বিভিন্ন সময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতি করেছেন তাদেরকেই মূল্যায়ন করবেন নেত্রী। নেত্রী সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ উদ্বোধনীকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এলাকায় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, দক্ষতা-সক্ষমতা এগুলো দেখা হবে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে। সব ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যেন হয় সেটাও দেখবো। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য অঙ্গন থেকেও বিবেচনা করা হবে।

এইউএ/এএইচ