ইতিহাস জানাচ্ছে আগেরবার রাউন্ড রবিন লিগ শেষে পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় হয়ে কোয়ালিফায়ার-১ খেলেছিল সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস এবং ফাইনালের টিকিট পাওয়ার সে লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে সবার আগে শিরোপার কাছে পৌঁছে যায় সাকিবের দল।
Advertisement
এবার সেই ঢাকাকে শেষ চারে পৌঁছতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। শুরুতে বেশ কিছুটা সময় সবার ওপরে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা এবার শেষ চারের টিকিট পেয়েছে সবার পরে। নকআউট পর্বে পা রাখতে ঢাকাকে একদম শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতেও হয়েছে। সময়ের প্রবাহতায় পিছিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত শেষ ম্যাচে খুলনাকে হারিয়ে চার নম্বর দল হিসেবে শেষ চারে ঢাকা।
কাগজে কলমে লাইনআপ বেশ সমৃদ্ধ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই অন্যতম সেরা, সফল এবং অতি কার্যকর অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ও সাকিব আল হাসান ঢাকার মূল চালিকাশক্তি। এর বাইরে সুনিল নারিনের মত ‘ইউটিলিটি’ পারফরমার এবং কাইরন পোলার্ডের মত ফিনিশারও এবার ঢাকায়।
প্রথম দিকে ওপেনার হিসেবে আফগান হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের ব্যাটিং সাফল্য দলকে অ্যাডভান্টেজ হিসেবে কাজ করলেও টুর্নামেন্ট যতই সামনে এগিয়েছে জাজাইয়ের ব্যাটের ধারও ততই কমতে শুরু করেছে। সে কারণেই এখন ওপেনিংয়ে বিকল্পের সন্ধানে ঢাকা। শেষ মুহূর্তে উড়িয়ে আনা হয়েছে উপল থারাঙ্গাকে।
Advertisement
আবার কাল শনিবার শেষ মুহুর্তের সংযোজন ইংলিশ তারকা ব্যাটসম্যান লুক রাইট। এবার কি করবে ঢাকা? বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে ফাইনালে পৌঁছতে পারবে? আগের বার দ্বিতীয় হয়ে শেষ চারে থাকায় সুবিধা ছিল। কোয়ালিফায়ার-১’এ হারলেও একটা সুযোগ থাকতো। যেটা এবার আছে রংপুর ও কুমিল্লার। লাইন আপ হিসেব করলে মানে কাগজে কলমে হিসেব কষলে সেখানে ঢাকার থাকার কথা ছিল।
কিন্তু মাঠের হিসেব অন্য। মাঠে শুরুতে বেশ শক্তিশালী ও ব্যালেন্সড দল মনে হলেও ধীরে ধীরে ঢাকা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এখন তাই এলিমিনেটর খেলতে হচ্ছে। সেখানে সাকিব বাহিনীর প্রতিপক্ষ মুশফিকুর রহিমের চিটাগং ভাইকিংস।
এই যে তুলনামুলক সমৃদ্ধ দল নিয়েও শেষ পর্যন্ত চার নম্বর দল হিসেবে সবার পরে নকআউট পর্বে আসা, এটাকে কিভাবে দেখছেন ঢাকা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন? কি ভাবছেন, কাগজে কলমের অন্যতম সমৃদ্ধ লাইনআপ নিয়ে দলের পারফরম্যান্স ও রাউন্ড রবিন লিগের অবস্থান দেখে হতাশ এ অভিজ্ঞ ক্রিকেট যোদ্ধা?
কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে খালেদ মাহমুদ সুজন এ বাস্তবকে মেনে নিয়েছেন। তার উপলব্ধি, অবস্থান যেখানেই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তো নক আউট পর্ব পার হয়েই ফাইনালে যেতে হবে। হয়তো আগেরবার দুই নম্বরে থাকায় নকআউট পর্বে একটি ম্যাচ বেশি খেলার সুযোগ ছিল। এবার তা নেই।
Advertisement
কাল চিটাগংয়ের কাছে হারলেই বিদায়। এমন চরম ও কঠিন সত্যর মুখোমুখি হয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, যা হয়েছে, এমনটি হতেই পারে। তার কথা, ‘যদি আমরা কোয়ালিফায়ারে খেলতাম, এক অথবা দুইয়ে থাকতাম এরপরেও আমাদের নকআউটেই খেলতে হতো। সেখানে একটি সুযোগ থাকতো হয়তো। আমি ধরলাম একটি বেশি নকআউট ম্যাচ খেলতে হবে এটাই আরকি।’
‘এ পর্বে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক ক্লোজ ম্যাচ হেরেছি। এমনটা হতেই পারে। সেই সময়টায় হয়তো আমরা ফ্লো ধরে রাখতে পারিনি। ক্লোজ ম্যাচ হেরে গিয়েছি। এরপরেও যে আমরা গতকাল জিততে পেরেছি এবং অনেক প্রভাব ও প্রাধান্য বিস্তার করে জিততে পেরেছি সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মধ্যে খুব ভালো কামব্যাক। আমরা হারলে বাদ হয়ে যাবো টুর্নামেন্ট থেকে এমন অবস্থা ছিলো। তবে এখনও আমরা আছি টুর্নামেন্টে, সেটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ।’
নকআউট পর্ব এটা। আপনি জিতলে থাকবেন, হেরে গেলে বিদায় নিতে হবে। এমন একটি অবস্থায় অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি। এর আগে রাউন্ড রবিন লিগে তার দল দুবারই চিটাগং ভাইকিংসের কাছে হেরেছে। তা মাথায় আছে সুজনের। তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে চিটাগংয়ের বিপক্ষে হেরেছিলাম লিগের ম্যাচে। তবে কালকে একটি নতুন দিন। আমরা খুব ক্লোজলি তাদের সাথে হেরেছি। আমি বিশ্বাস করি যে বিদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে উপুল এসেছে, নতুন একটি ফরমেশন তৈরি হয়েছে দলের। আশা করি আপনি যেটি বলছেন যে বিদেশি ক্রিকেটাররা এখনও সেভাবে পারফর্ম করেনি, হয়তো বা এই সময়ের জন্যই করেনি। এই সময়ে হয়তো জ্বলে উঠবে। আন্দ্রে রাসেল এমন একজন ক্রিকেটার যে কিনা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে।’
সুজনের ধারণা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মোমেন্টাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগের বার রংপুর শেষ দিকে গিয়ে ছন্দ পেয়ে দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছিল। এবার নিজ দলকে নিয়ে তেমনটাই আশা সুজনের। তার বিশ্বাস, সঠিক সময় ছন্দ পেলে তার দলও শেষ হাসি হাসতে পারে। ফাইনালে খেলার জন্য যেমন ভাল দল দরকার, তার দলও তেমন ভাল।
সে বিশ্বাস থেকেই মুখে একথা, ‘রংপুর গত আসরে সঠিক সময়ে মোমেন্টামটি ধরে ফেলেছিলো। জনসন চার্লসের শতক, ক্রিস গেইলের শতকটি আমাদের বিপক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তেমনটাই আমি বললাম যে আসলে মোমেন্টামটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কাল জয়ের পর আমরা একটি নিঃশ্বাস নিতে পেরেছি সত্যি কথা বলতে। আমরা মোমেন্টামটি কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছি। কিছুটা আশ্বাস, ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, সেটাই আসলে বড় জিনিস। আশা করি এই মোমেন্টামটি ধরে রাখতে পারবো। এখনই তো বলতে পারবো না যে ৮ তারিখে খেলবো কি খেলবো না। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য নকআউট। সুতরাং প্রত্যেক ম্যাচেই আমাদের সেই এক্সিকিউশন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে। আর আমি বিশ্বাস করি যে ঢাকা সামর্থ্যবান একটি দল এবং ফাইনালে খেলার জন্য ভালো দল।’
এআরবি/এসএএস/