দেশজুড়ে

কতদূর এগিয়েছে পেট্রলবোমায় ৮ বাসযাত্রী হত্যা মামলা?

কুমিল্লায় নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় ঘুমন্ত ৮ যাত্রী নিহতের ঘটনার চার বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৫ সালের এই দিনে (৩ ফেব্রুয়ারি) জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় এ নাশকতার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় কুমিল্লার আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি আগামীকাল সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ধার্য রয়েছে। নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের ৪ বছরেও অধিকাংশ আসামি পলাতক রয়েছেন। নানা কারণে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলেও আদালত সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের নৈশকোচটি (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৪০৮০) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর নামক স্থানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ জন এবং পরে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে কক্সবাজারের রাশেদুল ইসলাম (৪২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপসেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হাজী রুকনুজ্জামানের ছেলে নুরুজ্জামান পাপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসলিম (১৪), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের ছেলে আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩) এবং শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার ছেলে ওয়াসিম (৩৮)।

নিহতদের মধ্যে ওয়াসিম ছাড়া সকলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করায় পরবর্তীতে মামলা তদন্তে বিপত্তি দেখা দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের মরদেহ ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর, যশোরের নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশার মরদেহ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি, শরীয়তপুরের ওয়াসিমের মরদেহ একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি এবং নরসিংদীর আসমা ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্তের মরদেহ ১ মার্চ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

Advertisement

মামলা ও চার্জশিট

নৃশংস এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষস্থানীয় ছয় নেতাকে হুকুমের আসামি করা হয়। মামলার ৭৭ জন আসামির মধ্যে তিনজন মারা যান ও পাঁচজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে খালেদা জিয়াসহ অপর ৬৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর কুমিল্লা আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও চার্জশিটে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম.কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভীকে হুকুমের আসামি করা হয়।

এদিকে এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ ৩৭ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালত পলাতক নোটিশ জারি করেছেন। কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার স্বাক্ষরে গত বছরের ৪ অক্টোবর এ নোটিশ জারি করা হয়। পলাতক এসব আসামির অধিকাংশই এখনও পলাতক রয়েছে পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু জানান, নাশকতার মামলায় গত বছরের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছিলেন। পরে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন।

তবে ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় কুমিল্লার আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে চার দফা পিছিয়ে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য রয়েছে। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।

কুমিল্লার আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন জানান, চৌদ্দগ্রামে হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ধার্য রয়েছে, এ মামলার বিষয়ে ওইদিনই কথা বলব।

এফএ/পিআর