খেলাধুলা

ক্ষুব্ধ সাইফউদ্দিন : আমি যে পারি সেটা আজ করে দেখিয়েছি

ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে ‘ডেথ ওভার’ বলে, ঘুরিয়ে বললে শেষ দিকের ওভার বোলিংয়ে তার রেকর্ড খারাপ। তবে সেটা বিপিএলে নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রমে প্রোটিয়া হার্ড হিটার ডেভিড মিলারের হাতে এক ওভারে পর পর পাঁচ ছক্কা হজম করার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে তার।

Advertisement

সেটা ছিল ইনিংসের ১৯ নম্বর ওভারে। তিন ওভারের প্রথম স্পেলে ২২ রান দেয়ার পর ইনিংসের ১৯ আর তার নিজের চতুর্থ নম্বর ওভারে পাঁচ ছক্কা খাওয়াসহ ৩১ রান দিয়ে বসেন সাইফউদ্দিন। তারপরও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি আরও কয়েকবার প্রথম দিকে ভাল বল করলেও শেষ দিকে গিয়ে মার খেয়েছেন এ মিডিয়াম পেসার।

আজ শেষ ওভারে যখন তার হাতে বল তুলে দেয়া হলো, তখন প্রেসবক্সে গুঞ্জন, আচ্ছা! প্রথম তিন ওভার দুর্দান্ত বল (১১ রানে তিন উইকেট) করা সাইফউদ্দিন আবার শেষ ওভারে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলবে নাতো?

প্রশ্নটা আরও জোরালো হলো ম্যাচের ৪০ নম্বর ওভারের শেষ ডেলিভারির ঠিক আগে। ওই ওভারে প্রথম চার বলে মাত্র এক রান দিয়ে রুবেল হোসেনের উইকেট পাওয়া সাইফউদ্দিন পঞ্চম বলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ওয়াইড ইয়র্কার ছুড়েও ঢাকা ডায়নামাইটসের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মিডল অর্ডার আন্দ্রে রাসেলের হাতে ছক্কা খেয়ে বসেন।

Advertisement

শেষ বলে ঢাকার যখন ছয় রানের দরকার পড়ে, তখন প্রায় প্রতিটি দর্শক, অনুরাগি এমনকি কুমিল্লা ভক্তদের মনেও সেই ডেভিড মিলারের হাতে সাইফউদ্দিনের এক ওভারে পাঁচ ছক্কা খাওয়ার কথা মনে পড়ে। টিভিতে দেখা সেই ওভারের স্মৃতি ভেসে ওঠে।

অবশ্য এবার আর ব্যর্থতা নয়, সাইফউদ্দিন এক পারফেক্ট ইয়র্কার ছুঁড়ে আন্দ্রে রাসেলের আগ্রাসী ব্যাটকে থামিয়ে দেন। তার বলে ছক্কা হাঁকানো বহুদুরে, ঠিকমত খেলতেই পারেননি আন্দ্রে রাসেল। উল্টো হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। তার আগে ব্যাটের ভিতরে কোনায় লেগে বল চলে যায় মাটি কামড়ে ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার ওপারে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১ রানের দারুণ জয়ের নায়ক বনে যান সাইফউদ্দিন। খেলা শেষে প্রেস কনফারেন্সেও উঠল সেই একই প্রশ্ন, ‘আচ্ছা! আপনি যখন শেষ বল করতে যাচ্ছিলেন, তখন কি ডেভিড মিলারের হাতে এক ওভারে খাওয়া পাঁচ ছক্কার কথাই মনে হচ্ছিল?’

জবাব দিতে গিয়ে রীতিমত চটে গেলেন সাইফউদ্দীন। বলে উঠলেন, ‘আমি প্রেস কনফারেন্সে আসলেই আপনারা সবাই মিলারের কথা বলেন। স্বাভাবিক, ক্রিকেটে যেটা চলে গেছে সেটা তো চলেই গেছে। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারছি আজকের ম্যাচে। আমি পারি সেটা আজ করে দেখিয়েছি। সামনে এমন সুযোগ পেলে আজকের মতন দলকে জেতানোর, আরও করার চেষ্টা করবো।’

Advertisement

কথাগুলোর মাঝে ঝাঁঝ, রাগ, ক্ষোভ আছে পরিষ্কার। মুখায়ব ও শরীরি অভিব্যক্তিতেও তা পরিষ্কার ফুটে উঠল। তবে তারপর যে কথাগুলো বললেন, তাতে বোঝা গেল সেই পাঁচ ছক্কা হজমের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এবং ডেথ ওভারে কিভাবে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে- তাও শিখেছেন।

জেনেছেন, বুঝেছেন- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাল করতে হলে গড়পড়তা বোলিংয়ের থেকে বেটার কিছু করে দেখাতে হবে। সেই বোধ উপলব্ধি থেকেই নিজেকে উন্নত করা।

আর তাই মুখে এমন কথা, ‘আমরা যারা ক্রিকেটার, যারা ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার। এদের মধ্যে যারা স্টার, এভারেজ প্লেয়ার হলে কোন দাম নেই। অন্য প্লেয়ার থেকে অতিরিক্ত অনেক কিছু দেখাতে হবে। এটা আমি মাথায় নিয়েই বোলিং করি। কারণ আমাকে যদি কুমিল্লা অনেক অগ্রাধিকার দেয়, যে গুরুত্বটা দেয়, সেই গুরুত্বটা সবসময় ধরে রাখার চেষ্টা করি। আর আমি উপভোগ করি চাপের মধ্যে বল করতে।’

ঢাকাকে হারানোর অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাইফউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, বিপিএলের টপ টিম ঢাকা। এই টিমের সাথে জিততে পারা অনেক বড় ব্যাপার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুইটা হিটার ছিল উইকেটে। এর আগেও আমি ওর (আন্দ্রে রাসেল) বিপক্ষে বল করেছিলাম, ছয় খেয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল আমি পারব। আর তামিম ভাইকে ধন্যবাদ, তিনি প্রতিটি বলে সাহস দিচ্ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ। স্বাভাবিক, আমার চেষ্টা অন্য কিছু করার। যেহেতু ওয়ানডে টিমে জায়গা ধরে রাখা খুব চ্যালেঞ্জিং। শুরু থেকেই আমি চেষ্টা করছি কিছু একটা করতে হবে, সেই চেষ্টাই করছি।’

শেষ ওভারের প্ল্যানটা কি ছিল? জানতে চাইলে সাইফউদ্দীন বলেন, ‘সবাই প্ল্যান নিয়ে আগায়। আমার প্ল্যান ছিল ওয়াইড ইয়র্কার। তবে রাসেল পাওয়ার হিটার, সে ভালো ছয় মেরে দিয়েছে। যেহেতু ওয়াইড ইয়র্কার হয়নি, তাই লাস্ট বল ১০০% ইয়র্কার করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হল, মোস্তাফিজ একই রকম একটা ম্যাচ জিতিয়েছিল রংপুরের বিপক্ষে। আমি এগুলো অনুভব করছিলাম। মোস্তাফিজ আমার বয়সী। ও পারলে আমি কেন পারব না। এই জিনিসটা মাথায় রেখে আমি বল করে সফল হয়েছি।’

শেষ ওভারের দু’ওভার আগে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আহত হয়ে সাময়িকভাবে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। সেখান থেকে শেষ ওভারে ইনজুরি নিয়ে বোলিং করে দল জেতানো। সেটা কি করে সম্ভব হয়েছিল?

সাইফউদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা আমার ঘরের মতই। আমাকে যখন কেউ চিনত না, অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে, তখন ওরা আমাকে পিক করে। সুযোগ দেয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। শুরুতে ভালো করিনি। তবুও ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ দিয়েছে। আজ আমি সাইফউদ্দিন বিপিএলে ইস্টাবলিস্ট হয়েছি। এ জন্য সামান্য ব্যথা পেলেও টিমের জন্য পারফর্ম করার চেষ্টা করেছি। সামনে সুযোগ হলে আবার করব।’

এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ