অর্থনীতি

রীতি ভেঙে ভিড় কম বাণিজ্য মেলায়

বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে অলিখিত একটা রীতি আছে। তা হলো- শুক্রবার মানেই এ মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শুধু শুক্রবার বলেই নয় শনিবার বা মেলা চলার মধ্যে কোনো সরকারি ছুটি পড়ে গেলেও মেলায় বেড়ে যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়।

Advertisement

তবে আজকের শুক্রবার যেন ভিন্ন। শুক্রবার হলেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের পরিচিত সেই দৃশ্য দেখা গেল না সকাল থেকে। তবে দিনের এখনও অর্ধেকটা সময় বাকি আছে। বিকেল বা সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় বাড়ার সম্ভাবনাও ছেড়ে দেয়া যাচ্ছে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার ১ জানুয়ারির পরিবর্তে মেলা শুরু হয়েছে ৯ জানুয়ারি। শেষ হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে এটি মেলার চতুর্থ শুক্রবার। মেলার একেবারে শেষদিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারিও পড়েছে শুক্রবার।

এ ছাড়াও আজ বিকেল ৩টায় রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রঙ্গনে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। এরকম পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ বলছেন, মেলা শুরুর পর গত তিন শুক্রবারের তুলনায় আজ চতুর্থ শুক্রবার দর্শনার্থী কম হয়েছে। তবে তা দুপুরের পর বোঝা যাবে।

Advertisement

এ রকম বাস্তবতায় বাণিজ্য মেলার ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, জনসমাগম হলেও এ বছর তাদের ব্যবসা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্য মেলার ক্রেতাদের বড় অংশ মধ্যবিত্ত। মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা তুলনামূলক বেশি কেনাকাটা করেন। এ বছর দেরিতে মেলা শুরু হওয়ায় সেই প্রথম সপ্তাহ বাণিজ্য মেলা ধরতে পারেনি। মধ্যবিত্ত শ্রেণি জানুয়ারি মাসের বেতনের বড় অংশ অন্যখাতে খরচ করেছেন।

অন্যদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা, চলবে বাণিজ্য মেলাও। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ফেব্রুয়ারি মাসের টাকাও পুরোটা বাণিজ্য মেলায় আসবে না, একটা অংশ যাবে বইমেলাতে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়নি, এই ধারণাও অনেকের কাছে পরিষ্কার নয় বলে মনে করেন গাজীপুর থেকে বাণিজ্য মেলায় আসা মারুফ হাসান। একটি তৈরি পোশাক কারখানায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মারুফ হাসান বলেন, ‘আমি জানতাম জানুয়ারি মাসে বাণিজ্য মেলা শেষ হয়ে যায়। পরে অন্যভাবে নিশ্চিত হয়ে আজ মেলায় এসেছি।’

Advertisement

সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে শুক্রবার সকালে মেলায় আসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুল কাইয়ুম। বিষয়টি তিনি দেখছেন একটু ভিন্নভাবে। তার মতে, ‘বই কিনব বলে যে থালা-বাটি কিনব না, তা তো নয়। দুই জায়গাতেই দর্শনার্থীরা যাবেন। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন দুটো হওয়ায় চাকরিজীবীদের জন্য বিষয়টা ম্যানেজ করা একটু কঠিন হবে।’

বাণিজ্য মেলার বেস্টন স্টলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লিটন বলেন, ‘আজ বইমেলা শুরু হলেও মেলার অনেক কাজ বাকি থাকবে। তা ছাড়া বইমেলা জমে উঠতেও সময় লাগবে। তারপরও বাণিজ্য মেলার ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় কিছুটা হলেও ভাটা থাকবে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। এ বছর শুরু হয়েছে ৯ জানুয়ারি। ফলে জানুয়ারি মাসে বেতন পেয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেতনের বড় একটা অংশ অন্য খাতে খরচ করে ফেলেছেন; যেটা তারা বাণিজ্য মেলায় করত। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পেয়ে এখন তারা বইমেলা ও বাণিজ্য মেলায় খরচ করবে।’

‘তারপরও হয়তো অনেকে সস্তায় মালামাল কিনতে অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করবে। কিন্তু বেশি দামে তারা কিনবে না। মাল যাতে আটকে না থাকে সেজন্য, যেটা আমরা ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতাম, মেলার শেষ দিকে এসে সেটা ১২০০ বা দেড় হাজার টাকায় ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের বিক্রি হলো, কিন্তু লাভ হলো না’, যোগ করেন লিটন।

লিটন অবশ্য মনে করেন না আজ আগের তিন শুক্রবারের চেয়ে ভিড় কম।

তবে আগের তিন শুক্রবারের চেয়ে আজ দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম বলে মনে করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ আফসানা আফরোজ।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য শুক্রবার এখানে দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। তবে আজকে সেই তুলনায় দর্শনার্থী দেখছি না। দর্শনার্থী কমে গেলে তো ক্রেতাও কমে যাবে। এই হিসাবে অন্য শুক্রবারগুলোর তুলনায় বেচাকেনাও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

আফসানা আফরোজ আরও বলেন, ‘এক মেলার সময় চলছে দুই মেলা। দুই মেলাতেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির কেনাকাটার অনেক কিছু থাকে। ফলে একই সঙ্গে দুই মেলা পড়ে গেলে তাদের ওপর চাপ বেড়ে যায়।’

অন্যান্য বাণিজ্য মেলার তুলনায় এ বছর তুলনামূলক কম বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তাদের একজন নার্গিস মাসুদ।

তিনি বলেন, ‘এবার মেলায় মানুষের সমাগম হচ্ছে। তবে অন্যবারের তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। বইমেলা ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রভাব পড়বে এতে।’

পিডি/এনএফ/এমএস