মানিকগঞ্জে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে এক প্রসূতি মায়ের রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট দুই ধরনের পাওয়া গেছে। পরে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে আগের রিপোর্টটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি ধরা পড়ে বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জ বলাকা জেনারেল হাসপাতালে মিনু আক্তার (৩০) নামে ওই প্রসূতির সিজার হওয়ার আগ মুহূর্তে।
Advertisement
চিকিৎসকরা বলছেন, ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের পুনাইল গ্রামের সিংগাপুর প্রবাসী সফিকুর ইসলামের স্ত্রী মিনু আক্তার। তিনি ৪ মাস আগে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌর সুপার মার্কেটে অবস্থিত সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করান। তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ‘এ’ পজিটিভ রিপোর্ট দেয়া হয়। রিপোর্টে ল্যাব টেকনোলজিস্ট সুমন দাস ও ডা. সামছুন্নাহারের স্বাক্ষর রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মিনু আক্তারের প্রসব বেদনা দেখা দেয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে জেলা সদরের বলাকা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ওসমান গণির শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মিনুর রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে ‘এ’ পজিটিভ গ্রুপের দুজন রক্তদাতাকে তারা হাসপাতালে উপস্থিত রাখেন।
Advertisement
সিজারের পর এই রক্ত মিনু আক্তারের শরীরে পুশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু রক্তদাতা ও রোগীর রক্তের ক্রস-ম্যাচিং করতে গিয়ে মিনুর রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ নয়, ‘এ’ নেগেটিভ বলে জানায় বলাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই ব্যক্তির দুই ধরণের রক্তের গ্রুপ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান মিনুর স্বজনরা। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করান। সেখানেও ‘এ’ নেগেটিভ বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। এরপর মিনুর স্বজনরা সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে ঘটনা জানালে তারা পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করেন। আগের বার ‘এ’পজিটিভ রিপোর্ট দেয়া হলেও পরের বার মিনু আক্তারের রক্তের গ্রুপ ‘এ’নেগেটিভ বলেই রিপোর্ট দেয় তারা।
রক্তের গ্রুপ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় অস্ত্রোপচারও বিলম্বিত হয়। তাৎক্ষণিক ‘এ’ নেগেটিভ গ্রুপের ডোনার সংগ্রহ করতে না পারায় প্রসূতিকে রক্ত দেয়াও সম্ভব হয়নি।
গাইনি চিকিৎসক ডা. ওসমান গণি বলেন, মিনু আক্তারের এটি তৃতীয় গর্ভধারণ। তাই এই সময়টা প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য জরুরিভাবে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সিজারের সময় রক্তদাতাকে উপস্থিত রাখার কথা বলা হয়। সিজারের আগে রক্তদাতাকে নিয়ে রোগীর রক্তের ক্রস-ম্যাচিং করাতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। ৪ মাস আগে (গত ১৪ সেপ্টেম্বর) বেসরসকারি সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে পরীক্ষা করে তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’পজেটিভ বলে জানা যায়। কিন্তু পরে আরও দুটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে মিনুর রক্তের গ্রুপ আসলে ‘এ’ নেগেটিভ।
Advertisement
তিনি আরও জানান, সাধারণত ক্রস-ম্যাচিং ছাড়া রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করা হয় না। তবে ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল।
মিনু আক্তারের ফুফাতো ভাই টিপু সুলতান (কিবরিয়া) জানান, তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’পজেটিভ। তাই বোনকে রক্ত দিতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু পরে ক্রস-ম্যাচিংয়ের সময় জানা যায় মিনুর রক্তের গ্রুপ ‘এ’নেগেটিভ। তাই রক্ত না দিয়েই ফিরে যান তিনি।
একই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপের দুই ধরণের রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট সুমন দাস জানান, ৪ মাস আগে মিনু আক্তারের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখন তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’নেগেটিভই পাওয়া যায়। তবে প্রিন্টিং মিসটেকের কারণে রিপোর্টে ‘এ’পজিটিভ লেখা হয়। এটা আসলে চরম ভুল। এজন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী।
তিনি জানান, প্রিন্টিং ভুল করার কারণে ইতিমধ্যে আছমা আক্তার নামে একজনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল মালেক জানান, একই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ দুই রকম হওয়ার ঘটনাটি তার জানা নেই। এ বিষয়ে রোগীর পক্ষ থেকে যদি লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বি.এম খোরশেদ/আরএআর/পিআর