ফতুল্লায় তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শুক্কুর আলী ও টিক্কা রাকিব নামে আরও দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
Advertisement
বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালত শুক্কুরের ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবীরের আদালত টিক্কা রাকিবের রোমহর্ষক এ জবানবন্দী গ্রহণ করেন।
সুরুজ ওরফে শুক্কুর (২২) খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা থানার ছোট মেরুল ২নং কলোনি ট্রাস্ট টিলার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকায় বসবাস করেন। আর টিক্কা রাকিব (২০) চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার গাজীবাড়ী গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে ফতুল্লায় বসবাস করেন।
জবানবন্দীতে তারা জানান, গণধর্ষণ ও হত্যার আগে মেয়েটির প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তারপরও বন্ধুরা মিলে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে পালিয়ে যায় ৮ বন্ধু।
Advertisement
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, জবানবন্দী গ্রহণ শেষে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী অফিসার ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা বলেন, গ্রেফতার শুক্কুর আলী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। জবানবন্দিতে শুক্কুর আলী জানিয়েছে মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধি ছিল।
তিনি আরও জানান, তাদের দু’জনের আগে একই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে কাশিপুর ভোলাইল এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে জুয়েল হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।
জবানবন্দীতে আসামিরা জানিয়েছে, গত ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় শহরের কলেজ রোডে ঘুরতে দেখে ওই তরুণীকে অটোরিকশায় উঠিয়ে কাশিপুরের ভোলাইল এলাকায় নিয়ে যায় আসামিরা। সেখানে নিয়ে মেয়েটির গায়ে হাত দিয়ে দেখে শরীরে প্রচণ্ড জ্বর, তার মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। এ অবস্থায় তারা ৮ জন মাঠে নিয়ে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
Advertisement
শুক্কুরের বন্ধু টিক্কা রাকিব জানিয়েছে, সে সড়কে দাঁড়িয়েছিল। এসময় শুক্কুর এসে তাকে বলে এখানে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে কোথায়। তখন টিক্কা রাকিব বলে জুয়েল, অনিক, আবু তালেব, তৌফিক, সাগর এবং রাসেল মাঠের দিকে নিয়ে গেছে। এরপর শুক্কুরের সঙ্গে টিক্কা রাকিবও মাঠে যায়। গিয়ে দেখে তারা মেয়েটিকে ধর্ষণ করছে। পরে শুক্কুরও মেয়েটিকে ধর্ষণ শেষে টিক্কা রাকিবকে ধর্ষণ করতে বলে। ওই সময় মেয়েটি হাত পা এদিক ওদিক ছুড়ছিল। এতে টিক্কা রাকিব ধর্ষণ করেনি। মেয়েটির এই অবস্থা দেখে জুয়েল বলে একে বাঁচিয়ে রাখলে সমস্যা হবে। এরপর জুয়েলের কথামতো শুক্কুর মেয়েটার গলা টিপে ধরে। সাগর, রাসেল এবং আবু তালেব মেয়েটার হাত ধরে টিক্কা রাকিব, অনিক এবং তৌহিদ পা চেপে ধরে। তখন শুক্কুর মেয়েটাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলে জুয়েল মেয়েটার বুকে দুইটি ঘুষি মেরে গলা টিপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুনায়ির ফতুল্লার ভোলাইল এলাকায় পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ২২ বছর বয়সী ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।
শাহাদাৎ হোসেন/এফএ/জেআইএম