দেশজুড়ে

ভুতুড়ে মণ্ডপের ৫শ কেজি চাল কমিটির পেটে

সদ্য সমাপ্ত শারদীয় দুর্গাপূজায় চারটি অস্তিত্বহীন পূজা মণ্ডপের নামে বরাদ্দ নিয়ে সাড়ে ৫শ কেজি জিআর চালের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, সম্পাদকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে। কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের। এসব অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল সাম্পান ঘাটপাড়া এলাকার রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মনি কাঞ্চন দে।

Advertisement

গত ৬ ডিসেম্বর তিনি এ অভিযোগ দেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মনি কাঞ্চন দে অভিযোগে উল্লেখ করেন, কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপক দাশ নামে-বেনামে পূজা মণ্ডপ দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। ২০১৮ সালেও জেলা প্রশাসকের কাছে সদর উপজেলার ৬৫টি মণ্ডপের তালিকা দেয় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। এ তালিকায় ৪টি অস্তিত্বহীন মণ্ডপের নামও রয়েছে।

তালিকায় খুরুশকুল সাম্পান ঘাটপাড়া এলাকায় শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির সুভাষ দে’র বাড়ি নামে একটি পূজা মণ্ডপের নাম রয়েছে। অথচ ওই নামে কোনো মন্দির নেই। সুভাষ দে নামে কোনো ব্যক্তিও নেই। এছাড়া তাদের এলাকা সাম্পান পাড়ায় কোনো ঘট পূজা হয় না বলেও জানিয়েছেন মনি।

Advertisement

তিনি জানান, জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগের একটি অনুলিপি দুদক চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টম্বর দুর্গাপূজার ব্যয় বহনের জন্য জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়। অন্যান্য উপজেলার সঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৬৫টি মণ্ডপের নাম রয়েছে এ তালিকায়। এতে ৩৪টি প্রতিমা এবং ৩১টি ঘট পূজা মণ্ডপের কথা উল্লেখ রয়েছে। তালিকা পেয়ে জেলা প্রশাসন থেকে ৬৫ মণ্ডপের জন্য ৩৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বছর ১১ অক্টোবর বরাদ্দকৃত জিআর চাল মণ্ডপ ভিত্তিতে সরবরাহও করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, জমা দেয়া তালিকায় থাকা ঝিলংজা ইউনিয়নের রিতা রানী দে’র বাড়ির দুর্গোৎসব, খরুলিয়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব, পিএমখালী কাটালিয়া মুরা সার্বজনীন দুর্গোৎসব এবং খুরুশকুল সাম্পান পাড়া এলাকায় শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির সুভাষ দের বাড়ি নামে চারটি মণ্ডপই ভুয়া। কিন্তু অস্তিত্বহীন এ চারটি মণ্ডপের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইওর স্বাক্ষরিত সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপক দাশের নামে ডিওর মাধ্যমে এ চার মণ্ডপসহ পুরো উপজেলার ৬৫ মণ্ডপের ৩৫ টন চাল উত্তোলন করা হয়।

পূজা উদযাপন পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা পিআইও, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার ইন্ধনে দিপক দাশ এসব মণ্ডপের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

Advertisement

অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম সাকিব এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানবেন।

কিন্তু প্রকল্পের টাকা ছাড় (প্রদান) দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশনার বিষয়ে বলা হলে তিনি (পিআইও) সরাসরি অফিসে গিয়ে কথা বলতে অনুরোধ জানান। তার সিডিউল মতো বুধবার অফিসে গেলে কৌশলে সরে পড়েন পিআইও সাকিব।

অফিস এলাকায় গিয়ে ফের ফোন করা হলে তিনি বলেন, আপনাকে সিডিউল দেয়ার কথা মনে ছিল না। আমি এখন ডিসি অফিসের মিটিংয়ে।

তবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি দীপক দাশ বলেন, প্রতিবছর দুয়েকটি মণ্ডপ বাড়ে। ওই মণ্ডপগুলো না চিনলেও তাদের বরাদ্দের টাকা হস্তান্তর করে দেয়া হয়েছে। তবে মাস্টার রোলের কিছু কিছু কাগজ এখনো তৈরি হয়নি।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচএম মাহফুজুর রহমান অভিযোগের কাগজাদি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা পরিষদের এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জেআইএম