খেলাধুলা

সেঞ্চুরির সঙ্গে যা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন ডি ভিলিয়ার্স

তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারেননি। রিকি পন্টিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি আর মাইকেল ক্লার্করা যেভাবে নিজ দলকে বিশ্বসেরার অনন্য কৃতিত্ব, গৌরব ও সন্মানে ভূষিত করতে পেরেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

তার ব্যাট ও নেতৃত্ব কোনোটাই প্রোটিয়াদের বিশ্ব সেরার আসনে বসাতে পারেনি। শুধু তাই নয়। ব্যক্তিগত কৃতিত্ব, সাফল্য-অর্জনটাও আহামরী কিছু নয়। টেস্টে ১১৪ ম্যাচে ৮৭৬৫ রান (রান তোলায় তার নাম ২০ নম্বরে)। তার দেশের জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথ আর হাশিম আমলাও তার ওপরে।

ওয়ানডেতেও রান তোলায় এবি ডি ভিলিয়ার্স অনেক পেছনে। সেরা দশে নেই। ২২৮ ম্যাচে ৯৫৭৭ রান করে শীর্ষ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় রয়েছেন ১৭ নম্বরে। ৫০ ওভারের ফরম্যাটেও স্বদেশি জ্যাক ক্যালিসের পিছনে তার অবস্থান। এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ডি ভিলিয়ার্স সেরা দশে নেই। ৭৬ ম্যাচে ১৬৭২ রান করে ত্রয়োদশ।

তাতে কি? সহজাত ব্যাটিং শৈলির অধিকারী ডি ভিলিয়ার্স তাই অনেক বেশি জনপ্রিয়। ব্যাকরণ মেনে প্রথাগত ব্যাটিং আর নিজের উদ্ভাবক শক্তি-সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে আক্রমণাত্মক ও ঝড়ো উইলোবাজির মিশ্রনে এবি ডি ভিলিয়ার্স এক অসাধারণ ব্যাটিং প্রতিভা হিসবেই পরিগণিত ও প্রতিষ্ঠিত। ক্রিকেটের গাণিতিক বা ব্যাকরণসন্মত ব্যাটিংটা তার খুব ভালোই জানা।

Advertisement

কিন্তু প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসে সিলেট (৩৪), ঢাকা (৪১) আর চট্টগ্রামে (১) প্রথম তিন ম্যাচে সেই চেনা-জানা ডি ভিলিয়ার্সের দেখা মেলেনি। সমালোকদের ভাষায় তেমন সুবিধা করতে পারেননি এ অসামান্য প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান।

কিন্তু সোমবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অবশেষে স্বরূপে এই প্রোটিয়া উইলোবাজ। শক্তিশালী ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ২০০.০০ স্ট্রাইকরেটে হাফ ডজন ছক্কা আর আট বাউন্ডারিতে ৫০ বলে ১০০ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে রংপুর রাইডার্সের গুরুত্বপূর্ণ জয়ের নায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স।

প্রেক্ষাপট অনুকুল ছিল না একদমই। যখন উইকেটে যান তখন দল মাত্র ৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রাইলি রুশো (০) আর বিপজ্জনক ও বিধ্বংসী উইলোবাজ গেইল (১) সাজঘরে।

সামনে ১৮৭ রানের বড় টার্গেট। এ রকম চাপের মুখে শুরুতে অল্প কিছুক্ষণ নিজেকে খোলসে আটকে রেখে এরপর ধীরে ধীরে স্ব-মূর্তি ধারণ করে উইকেটের সামনে, পিছনে ও দু’দিকে একের পর এক চোখ জুড়ানো শট খেলে শতরান পূর্ণ করে শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন ম্যাচসেরা ডি ভিলিয়ার্স।

Advertisement

সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগানোর চেষ্টাই ছিল কম। জানতেন ও বুঝতে পারছিলেন, আমি আর অ্যালেক্স হেলসের পর সে অর্থে আর ভাল ব্যাটসম্যান নেই। তাই আমাদের ম্যাচ শেষ করে আসতে হবে। আর তা ভেবেই স্কুপ , রিভার্স সুইপ, অনসাইডে সরে অফ সাইডে আগ্রাসি শট আর অফে সরে স্কোয়ার-ফাইন লেগের ওপর দিয়ে চালানোর চেষ্টাই ছিল কম।

পুরো ইনিংসে একবার এমন ঢঙয়ে খেলেছেন। অথচ একই ম্যাচে দারুণ আস্থা আর আত্ববিশ্বাস নিয়ে শুরু করা সাকিব উইকেটের সামনে ও দু’দিকে বেশ কটি চিত্তাকর্ষক শটস খেলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর পেসার ফরহাদ রেজার উইকেট সোজা বলে স্কুপ করতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শুধু সাকিব নন, মুশফিকও প্রায়ই উইকেটের সামনে ও দুদিকে দারুণ সব শট খেলতে খেলতে হঠাৎ স্লগ সুইপ, পায়ের কাছে পিচ পড়া বলে সুইপ ও স্কুপ করতে গিয়ে অকাতরে উইকেট দিয়ে আসছেন। তাতে অনেক সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যুও ঘটছে।

খুব বেশি পেছনে তাকাতে হবে না। এই রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পেসার শফিউলের বলে ওয়াইড লংঅনের ওপর দিয়ে দু’দুটি বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পর নাজমুল ইসলাম অপুর বিপক্ষে স্কুপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন তিনি। একইভাবে রাজশাহীর বিপক্ষে স্কুপ করতে গিয়ে সম্ভাবনাময় ইনিংসের মৃত্যু ঘটিয়েছেন মুশফিক।

ডি ভিলিয়ার্স দেখিয়ে দিলেন কোনো বিশেষ শটের ওপর যতোই নিয়ন্ত্রণ থাকুক, তা থেকে যত রানই আসুক- সে শট খেলার মতো পরিবেশ, পরিস্থিতি আছে কি-না তা মাথায় রাখা খুব দরকার। তাহলেই ভালো ইনিংসগুলো ইতিবাচক পরিণতি পাবে, ম্যাচ জেতানো ইনিংস হয়ে যাবে।

তিনি উদাহরণ তৈরি করলেন যে ভাল খেলা, নজর কাড়া ও আক্রমণাত্মক শটস উপহার দেয়াই শেষ কথা নয়। আসল কাজ হলো শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরা।

সেই কাজটাই কম পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ভাল খেলতে খেলতে একটা পর্যায়ে গিয়ে তারপর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। অহেতুক-অপ্রয়োজনীয় শট খেলে আউট। তাতে নিজের সম্ভাব্য ভাল ইনিংসগুলোর অপমৃত্যুর পাশাপাশি দলও বিপদে পড়ে যায়। যাচ্ছেও।

ডি ভিলিয়ার্সের সোমবারের ইনিংসটি তাই হতে পারে আলোকবর্তিকা।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি