আইন-আদালত

হাজির না হলে যমুনা ব্যাংকের এমডিকে গ্রেফতার করে আনুন

যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলম আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির না হলে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার শর্তযুক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

ওইদিন হাজির না হলে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসতে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের তলব আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাজির না হওয়ায় মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শুভ্রজিত ব্যানার্জি। যমুনা ব্যাংকের এমডির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ।

Advertisement

এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক গ্রাহকের রাখা এমটিডিআর অর্থ (মাসিক মুনাফা নেয়ার স্থায়ী সঞ্চয়) প্রদানে উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন না করায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করা হয়েছিল। আজকে তার পারসোনাল অ্যাপিয়ার (ব্যক্তিগত হাজিরা) ছিল। কিন্তু তিনি তার আইননজীবীর মাধ্যমে বলেছেন যে, তিনি আউট অব কান্ট্রি। দেশেল বাইরে চলে গেছেন এবং এই গ্রাউন্ডে তিনি সময়ও চেয়েছেন।

আমরা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, এটা তিনি চালাকি করেছেন। তিনি দেশের বাইরে গেছেন কি না আমরা জানি না। কারণ, তার ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট আদালতে সাবমিট করেননি।

তিনি জানান, সাবসিকোয়েন্টলি কোর্ট কন্ডিশনাল অর্ডার দিয়েছে, আগামী মাসের ১২ তারিখে তাকে হাজির হতে হবে। যদি না হন তবে ইনডিফল্ট অর্ডারে মতিঝিল থানার ওসি তাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবেন, ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

এ ছাড়া ওইদিন আদলত অবমাননার রুল শুনানি হবে বলেও জানান এ আইনজীবী।

Advertisement

জানা গেছে, আইনজীবী তালেবুর নূর ও এআইএম হাসানুল মজিব নামে দুই ব্যক্তি এক সঙ্গে পেঁয়াজের ব্যবসা করতেন। ২০০৫ সালে পাঁচ বছরের জন্য যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় ৫১ লাখ টাকার একটি মুদারাবা সঞ্চয়ী (এমপিডিআর) হিসাব খোলেন। এ তালেবুর নূরের সঙ্গে এআইএম হাসানুল মুজিব যৌথভাবে ২০০৬ সালে তুরস্ক থেকে দুই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেন।

কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তালেবুর নূর ঋণগ্রস্ত হন। এ কারণে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে তার ওই যমুনা ব্যাংকের ৫১ লাখ টাকার মালিকানা এআইএম হাসানুল মুজিবকে দেন। এরপর ২০১১ সালে এআইএম হাসানুল মুজিব টাকা তুলতে যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংক টাকা দিতে আপত্তি জানায়।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল মালিককে হাজির করতে হবে অথবা বিষয়টি যমুনা ব্যাংক নিষ্পত্তি করবে। এরপর টাকার জন্য হাইকোর্টে রিট করেন এআইএম হাসানুল মুজিব। রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে রিট আবেদনকারীকে টাকা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এ রায় স্থগিত করতে আপিল বিভাগে আবেদন করে যমুনা ব্যাংক। কিন্তু আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেনননি। এ অবস্থায় টাকা চেয়ে যমুনা ব্যাংকের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান এআইএম হাসানুল মুজিব। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তিনি আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। তারপরও টাকা না পেয়ে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলবের আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করে আজ মঙ্গলবার হাজির হতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/জেডএ/এমএস