আন্তর্জাতিক

সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অং সান সু চি

মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী ও দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি তার ক্ষমতার মেয়াদের গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে; এরমাঝেই মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে এনএলডি।

Advertisement

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, সংবিধানে পরিবর্তন আনার এই প্রস্তাবের ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অং সান সু চির এনএলডির মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে পারে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভূমিধস ঐতিহাসিক জয়ের পর এই প্রথম দেশটির সংবিধানে পরিবর্তন অানার প্রস্তাব করছে এনএলডি।

২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের জেরে দেশটির সামরিক এবং বেসামরিক নেতাদের ওপর ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মাঝে আকস্মিভাবে সংবিধান সংস্কারের এই উদ্যোগ নেয়া হলো। ওই বছর সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে প্রায় সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

আরও পড়ুন : ব্যর্থ প্রেমই সু চির মুসলিম বিদ্বেষের কারণ! 

Advertisement

মিয়ানমারের সংসদের উচ্চ কক্ষের এনএলডি দলীয় সদস্য ইয়ে তুত রয়টার্সকে বলেছেন, ‘তারা আজ সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। এটা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।’

২০০৮ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে। এতে সংসদের দুই কক্ষেই সেনাবাহিনীর জন্য এক চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। তবে মিয়ানমারের সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য অন্তত পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন। সংরক্ষিত আসন থাকায় সংবিধানে সংশোধনী আনার এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার কার্যকর ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর।

নির্বাচনে এনএলডি ভূমিধস জয় পেলেও সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সংবিধানের কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সুচি। সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সংবিধানে বলা হয়, স্বামী, স্ত্রী অথবা সন্তানের যদি বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে তাহলে দেশটির কোনো নাগরিক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্বামীর ঘরে দুই ছেলে রয়েছে।

আরও পড়ুন : কী করছেন শান্তির দূত আং সান সু চি? 

Advertisement

প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় দেশটিতে ‘স্টেট কাউন্সিলর’ নামে নতুন একটি পদ তৈরি করেন তিনি। প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মর্যাদাশীল এই পদে গত তিন বছর ধরে আসীন রয়েছেন সু চি।

দেশটির প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। মিয়ানমারে ৫০ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনবেন বলে নির্বাচনের আগে থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি।

আরও পড়ুন : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নতুন আতঙ্ক আরাকান আর্মি 

গত বছরের আগস্টে সিঙ্গাপুরে এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সংবিধানে সংশোধন আনা।

কিন্তু দেশটিতে সংবিধানে সংশোধনী ও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সু চির উপদেষ্টা কো নি। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রকাশ্যে দিবালোকে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।

তবে সংবিধানে সংশোধনী আনার ডাক দেয়ার সঙ্গে তার হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক আছে কি-না সেব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সূত্র : রয়টার্স।

এসআইএস/এমকেএইচ