খেলাধুলা

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম যেন এভিন লুইসের সাফল্যের স্বর্গ!

স্বদেশি ক্রিস গেইলের মত বিপিএলে ‘সোয়া এক গন্ডা’ (পাঁচটি) সেঞ্চুরি নেই তার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেরুন জার্সি গায়ে ২০ ওভারের ফরম্যাটের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর উইলোবাজ গেইলের (৫৬) চেয়ে ৩৬ ম্যাচ কম খেলে সমান দুটি করে সেঞ্চুরি এভিন লুইসের।

Advertisement

ওপরের ঐ ছোট্ট পরিসংখ্যান বলে দেয়, ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে তার ব্যাটিং সামর্থ্যও কম নয়; বরং যথেষ্ট। ঝড়ো ব্যাটিং বিশেষ করে ‘বিগ হিট’ নেবার ক্ষমতাটাও আছে বেশ। ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালামসহ ২০ ওভারের ক্রিকেটে যে হাতে গোনা কজনকে বিধ্বংসী উইলোবাজ ধরা হয় এভিন লুইস তাদের অন্যতম।

বিপিএলেও এভিন লুইসের শতরান আছে। সেটা দুই আসর আগে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর। কাকতালীয়ভাবে ঐ শতকটিও বন্দর নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সেবার বরিশাল বুলসের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি (৬৫ বলে সাত বাউন্ডারি আর ছয় ছক্কায় ১০১*) করেছিলেন লুইস।

আগের বার তারকাখচিত ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষে খেলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পুরো আসরে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে (৩১ বলে ৭৫) একটিমাত্র ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন শুধু।

Advertisement

এবার শুরু থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে যোগ দিলেও রান পাননি। উল্টো গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়ে শেষ চার ম্যাচ মাঠের বাইরে। অবশেষে আজ মাঠে ফিরেছেন এ ক্যারিবীয়ান ওপেনার।

দুপুরে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে খেলতে নেমে ম্যাচের তৃতীয় বলে তামিম ইকবালের ডাকে সাড়া দিয়ে সিঙ্গেলস নিতে গিয়ে পায়ের পেশিতে টান ধরে। মনে হচ্ছিল, আজও বুঝি মাঠ ছাড়তে হবে তাকে। বার কয়েক ফিজিও মাঠে এসে তার শুশ্রুষা করে যান।

তারপরও মাঝে মধ্যে খোঁড়াতে দেখা গেছে লুইসকে। এক কথায় শতভাগ সুস্থ হয়ে আর স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি। কিন্তু সেই অবস্থাতেই ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন লুইস। পয়োমন্তঃ ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় শতরানটিও করে ফেললেন, মাত্র ৪৭ বলে।

শেষ অবধি ৪৯ বলে ১০৯ রানের হার না মানা ইনিংস বেরিয়ে আসল লুইসের ব্যাট থেকে। শুধু শতরানই করেননি, ছক্কার অনুপম প্রদর্শনীও ঘটিয়েছেন। দশ দশটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন। সাথে ছিল পাঁচটি বাউন্ডারি।

Advertisement

মানে ১০৯ রানের মধ্যে শুধু ছক্কা (৬০) আর বাউন্ডারিতে (৫ বাউন্ডারি) তুলে নিয়েছেন ৮০ রান। তার ঐ ইনিংসের ওপর ভর করেই শেষ পর্যন্ত ২৩৭ রানের বিশাল স্কোর পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট বলেই প্রমাণ হয়েছে।

আর প্রতিপক্ষ খুলনা টাইটান্সের বোলিং তছনছ করা মাঠ মাতানো এবং ম্যাচ জেতানো ঐ ঝড়ো শতকের নগদ পুরষ্কার হিসেবে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন এভিন লুইস।

গ্রোয়েন ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়া, মাঠে ফিরে প্রথম ওভারেই হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়া; তারপরও পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করে শতরান হাঁকানো-দলের প্রতি দরদ, টান, কর্তব্যবোধ আর আত্মনিবেদেনের এক বড় উদাহরণ হয়ে থাকলেন এভিন লুইস।

দায়িত্ববোধের দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি ক্যারিবীয় দ্বীপ ত্রিনিদাদের লুইস আজ আরও একটি বার্তাও দিলেন। তাহলো বন্দর নগরীর সাগরিকার এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সঙ্গে যেন অন্যরকম সখ্য তার। এ মাঠ যেন তার অনেক পছন্দের। সাফল্যের পয়োমন্তও।

আর তাইতো বিপিএলে তার আগের শতক, গতবারের ৩১ বলে ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস এবং আজকের সেঞ্চুরি-সবই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এ মাঠই লুইসের সাফল্যের স্বর্গ। তাই না? যে মাঠ তাকে দুহাত ভরে এত কিছু দিয়েছে, সেই মাঠের কথা কি ভুলতে পারবেন লুইস?

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ