নওগাঁয় শুরু হয়েছে বোরো চাষাবাদ। এখন মাঠে মাঠে জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে বিদ্যুতের লো ভোল্টেজের কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অপরদিকে লোকসান ঠেকাতে আগামী বোরো ক্রয় মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তারা। চাষিরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমতো থাকলে সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বীজতলা রোপণ করা হয়েছে ১০ হাজার ১৫৬ হেক্টর। গত বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে ছিল হাঁড় কাপানো শীতের তীব্রতা। কয়েক দিন যাবত সূর্যের দেখা পাওয়া যেত না। তবে এবার ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে নওগাঁয়। মাঘ মাসেও যেন শীতের তীব্রতা তেমন বুঝতে পারছে না জেলাবাসী। সকাল হলেই বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে সূর্যের তীব্রতা। এতে বোরো চাষাবাদে স্বস্তিতে রয়েছেন কৃষকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে পানি সেচ, জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণের ব্যস্ততা। অপরদিকে নভেম্বরের শুরুতে হঠাৎ কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রভাব পড়ে ধানের চারায়। দেরিতে রোপণে (বিছন) বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয় ধানের চারার।
> আরও পড়ুন- চকরিয়ায় বাড়ছে সবজি চাষ
Advertisement
মহাদেবপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, গভীর নলকূপ দিয়ে আমাদের চাষাবাদ করতে হয়। সবাই একসাথে জমি তৈরি করতে নলকূপে চাপ পড়েছে। অপরদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি চলছে। দিনে ৫-৬ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। সাথে রয়েছে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ। গভীর নলকূপ থেকে ঠিকমতো পানি না পাওয়ায় জমি প্রস্তুত করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে যে বৃষ্টি হয়েছে এতে দেরিতে লাগানো বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। সাত বিঘা জমির জন্য যে বীজতলা করেছিলাম, পুরাটাই মারা গেছে। বাজারে যে ধানের চারা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে প্রতি বিঘার জন্য প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা খরচ পড়বে।
কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ডিএপি ১ বস্তা ১৩০০ টাকা, এমওপি ১ বস্তা ৮০০ টাকা, ইউরিয়া ১ বস্তা ৮০০ টাকা, কীটনাশক ১১০০ টাকা, জমি চাষ ও রোপণ ২ হাজার টাকা, পানি সেচ ১৫০০ টাকা এবং কাটা-মাড়াই প্রায় ২ হাজার টাকাসহ প্রায় ১০-১১ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি ফলন হয় ২০-২২ মণ। বাজারে ধানের দাম ৬৫০ টাকা করে। যাদের নিজস্ব জমি, তাদের কিছু থাকে। কিন্তু যারা বর্গাচাষী, তাদের কিছুই থাকে না। এতে প্রতিবছর আমাদের লোকসান গুনতে হয়। সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তাহলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে।
Advertisement
> আরও পড়ুন- রাজবাড়ীতে বেড়েছে হলুদের আবাদ
মর্তুজাপুর গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, এবছর শীত নাই। আবহাওয়া ভালো। চার বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। জমিতে চারা রোপণের ৭-৮ দিনের মধ্যে শেকড় দেয়। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকলেও ১২-১৫ দিনেও শেকড় দেয়নি। আবহাওয়া ভালো থেকেও তো কোন কাজে আসল না।
শ্রমিক সুবাস বলেন, বিগত বছরগুলোতে খুব কুয়াশা ও শীত ছিল। সকালে কাজ করা যেত না। কিন্তু এ বছর তেমন শীত নাই বললেই চলে। প্রতি বিঘাতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা চুক্তিতে জমি রোপণে কাজ করছেন। এতে কাজ করে যেমন সুবিধা হচ্ছে, তেমনি মজুরিও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। যেহেতু শীত প্রধান এলাকা। সেহেতু কৃষকরা একটু বেশি পরিমাণে বীজতলা তৈরি করে থাকেন। শৈত্য প্রবাহে যে পরিমাণ চারা ক্ষতি হয়েছে; লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরও যা অবশিষ্ট থাকবে তাতে পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় বিক্রি করা যাবে।
আব্বাস আলী/এসইউ/এমকেএইচ