১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের আনোয়ারাসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বিলীন হয়ে যায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। সেই থেকেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে উপকূলবাসী। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়ন শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি আনোয়ারায় সেই বেড়িবাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
অনিয়মের অভিযোগে গতকাল রোববার (২৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চুন্নাপাড়া গ্রামের গোদারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিষয়ে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, ‘বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পুরোনো। চার ইউনিয়নকে বাঁচাতে হলে সাপমারা খালের বাঁধ ভালোভাবে সংস্কার করতে হবে। এই দাবিতে স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারশত ইউনিয়ন থেকে শঙ্খনদ পর্যন্ত সাপমারা খালের ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটারব্যাপী অংশের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। এখানে মূল ঠিকাদারের বদলে কিছু উপঠিকাদার কাজ করছেন। মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা দিয়ে কাজটি বাগিয়ে নিয়েছে স্থানীয় জালাল উদ্দিন শাহসহ কয়েকজন উপঠিকাদার।
Advertisement
তারা আরও অভিযোগ করেন, খালের দুপাশের বাঁধ সংস্কার না করে উপঠিকাদারেরা খাল কেটে মাটি বিক্রি করছে। এমনকি খাল পাড়ের জঙ্গলা পরিষ্কার না করে তার ওপরেই যেমন-তেমনভাবে মাটি দেয়া হচ্ছে। বাঁধে কংক্রিটের ব্লক বসানোর ক্ষেত্রেও নদীর কালো বালি মেশানো হচ্ছে। ফলে বর্ষা আসার আগেই তা ধুয়ে গিয়ে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অন্তত চার ইউনিয়ন কয়েক লাখ বাসিন্দা।
এসব অভিযোগে গতকাল রোববার সকালে উপঠিকাদারের শ্রমিকেরা কাজ করতে এলে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেয়।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিজ চৌধুরী জানান, খাল কেটে মাটি বাইরে বিক্রি করছিল উপঠিকাদাররা। এ ছাড়া বাঁধ সংস্কারের শুরু থেকেই কাজে অনিয়মের শেষ নেই। ব্লক বসানোর ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ আছে। খরচ কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের বালি। তাই স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দিয়েছে।
বারশত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘সাপমারা খালের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজে অনিয়ম হচ্ছে। তাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’
Advertisement
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আনোয়ারা উপকূলীয় বেড়িবাঁধের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রকল্পে বাঁধের কিছু অংশে ব্লক বসানোর কথা থাকলেও পুরো বেড়িবাঁধ ব্লকের আওতায় আসেনি। বাঁধের যেসব অংশ ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব এলাকা ব্লক বসানোর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি অংশে হবে মাটির বাঁধ।
এমবিআর/এমএস