হঠাৎ করেই পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন আগেও যে পেঁয়াজ ছিল ৩৫ টাকা কেজি তা বেড়ে ঠেকেছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এরপর এক লাফেই কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে এখন তা ৯০ টাকা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির জন্য অজুহাত দেখানো হচ্ছে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়ে গেছে। ভারত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে এটা ঠিক- কিন্তু সেই পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজার পর্যন্ত পৌঁছতে আরো কয়েকদিন লাগার কথা। এছাড়া পিঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে। তাই স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।কথায় আছে- দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। ব্যবসায়ীদের আমরা দুর্জন বলতে চাইনা। আর সব ব্যবসায়ীর দায়-দায়িত্ব এবং নীতিনৈতিকতাও একই পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না। তবে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর লাভ ও লোভের কারণেই যে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। পেঁয়াজের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এবং ত্বরিৎ সেটি স্থানীয় বাজারে কার্যকর করা হচ্ছে। কিন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো কিছুর দাম কমলে সেটি সমন্বয় করতে অনেক সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রে তা সমন্বয়ই করা হয় না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে বেশ আগেই। অপরিশোধিত তেল ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলারে নেমে এসেছে। সে হিসেবে প্রতি লিটার তেলের দাম ৭ থেকে ১০ টাকা কমে যাওয়ার কথা। ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সর্বশেষ তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়। দুঃখজনক হচ্ছে, এরপর আর মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। এরফলে মানুষজনকে বেশি মূল্যে তেল কিনতে হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে কোনো সময় ক্ষেপন করা হয়নি। ভোক্তা অধিকার বলে যদি কিছু থাকতো তাহলে এই অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হতো না। মুনাফালোভী এই মানসিকতা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সরকারের হাতে খুব একটা নেই। তারপরও টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রেখে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়। সরকার বলছে, পেঁয়াজের যে মজুদ আছে তা দিয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলবে। এরপরও পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হল কী করে।এক্ষেত্রে কী কারো কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? ঈদুল আজহা আসতে আর মাত্র এক মাস বাকি। এই সময়ে পিঁয়াজের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। তাহলে কি ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটিই নিয়েছে? কোনো উৎসব আনন্দে মানুষ যাতে ভালভাবে অংশ নিতে পারে সে জন্য জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। ছাড় দেওয়া হয় বিশেষ বিশেষ পণ্য-দ্রব্যে। আমাদের দেশে ঘটে এর উল্টোটা। যে কোনো উসিলায় দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইন-কানুন নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নেই এখানে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২২-২৩ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশের কৃষকরা গত মৌসুমে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন। দেখা যাচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। এরজন্যই ভোক্তাদের পকেট কাটা হবে? আর সরকার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে। বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেটধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। অবিলম্বে পেঁয়াজের মূল্য জনসাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে যার যা করণীয় রয়েছে সেটি করতে হবে। এরজন্য সরকার-ব্যবসায়ী সকল পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। ত্যাগ করতে হবে মুনাফালোভী মানসিকতা। এইচআর/পিআর
Advertisement