জাতীয়

সরে যাচ্ছেন ডিএনসিসির অনেক মেয়র প্রার্থী

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রোববার দুপুর পর্যন্ত ২১ জন মনোয়নপত্র কিনেছেন। তাদের মধ্যে দু’জন ছাড়া সবাই গত বছর মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন।

Advertisement

উচ্চ আদালত এ নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর তাদের আর নতুন করে মনোনয়নপত্র কিনতে হবে না। কিন্তু এক বছর পর এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই এখন নির্বাচন করতে চাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তরের নির্বাচনের জন্য মেয়র পদে মনোয়নপত্র কিনেছেন সেলিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ (এনডিএম),  এইচবিএম ইকবাল (আওয়ামী লীগ),  মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), স্বাধীন আক্তার আইরিন (স্বতন্ত্র), শাকিল ওয়াহেদ (স্বতন্ত্র),  মো. মাসুম বিল্লাহ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি) রবিন কুমার পাল (ডিজিটাল আওয়ামী লীগ), গাজী ইয়াকুব ইসলামী (ঐক্যজোট,  কামরুল ইসলাম (বিএনএফ), আবুল কালাম আজাদ (জাতীয় বিপ্লবী পার্টি), আনিসুজ্জামান খোকন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ ওসমান গনি (আওয়ামী লীগ), মুরসালিন হায়দার (স্বতন্ত্র), ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র), এইচ এম গোলাম রেজা (স্বতন্ত্র), খালেদা খানম রুনু (বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন), জুনায়েদ সাকী (স্বতন্ত্র), জিল্লুর রহমান চৌধুরী (স্বতন্ত্র), আনিসুর রহমান ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও  আতিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ)।

একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকা উত্তরের মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৮টি করে মোট ৩৬টি পদে নির্বাচন হবে। তাদেরও মেয়াদ ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। তাই অনেকেই এখন এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও অনেক দল ও প্রার্থীর মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারাও পিছিয়ে যাচ্ছেন। 

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ রোববার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাতে নির্বাচনে যাওয়া আমাদের জন্য উচিত হবে না। বরং সরকারের উচিত হবে গণভবনে বসে তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা। এতে টাকার অপচয় হবে না। মানুষের সময়ও বাঁচবে।’

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ সাকী বলেন, ‘মেয়র পদে নির্বাচন করব কি না- এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাব।’

স্বাধীন আক্তার আইরিন স্বতন্ত্র হলেও তিনি আওয়ামী লীগ করেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও তাকে বিএনপি-জামায়াত মারধর করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জাগো নিউজকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজীবন আওয়ামী লীগের জন্য যুদ্ধ করলাম। প্রতিপক্ষের মারধর খেলাম। কুরবানি ঈদের আগে বিএনপি-জামাতের লোকেরা আমার তলপেটে লাথি মারে। এ জন্য অপারেশন করে অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। আমি এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করি। তবুও আওয়ামী লীগের বিজয় মিছিলে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে আবার অসুস্থ। কিন্তু এখন মেয়র পদে নির্বাচন করতে হলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জামানত লাগে। এত টাকা আমার নেই। আজীবন আওয়ামী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুললেও নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘এখন নির্বাচন করা মানে টাকার অপচয়। সরকার যেভাবেই হোক আতিকুল ইসলামকে নির্বাচিত দেখাবেন। তাই আমরা টাকা খরচ করতে চাই না।’

Advertisement

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী এইচবিএম ইকবাল গতবছর মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। কিন্তু দল থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় এবার আর তিনি নির্বাচন করবেন না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুর হত লন্ডনে মারা যান। পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি এ নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি স্থগিতের আদেশ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এখন নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর আইনি বাধা নেই।

এইচএস/এনডিএস/পিআর