পদ্মা নদীর চরে প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের ভোজ সারলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। যদিও এ আয়োজনকে ‘মিলন মেলা’ বলছেন এমপি আয়েন। আর দুই উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন শিক্ষকরাও। এতে ক্ষোভ দেখা দেয় অভিভাবকদের মাঝে।
Advertisement
শনিবার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কসবা এলাকায় পদ্মা নদীর চরে এর আয়োজন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন মাহবুবা বলেন, শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি থাকে। ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি নিয়ে তারা সেই ছুটি যেকোনো দিন নিতে পারেন। হয়তো তারা সেই ছুটিই নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। অনুষ্ঠানে আমারও দাওয়াত ছিল। আমি যাইনি।
জানা গেছে, মিলনমেলায় এমপি আয়েন উদ্দিন নিজে উপস্থিত থেকে পুরো অনুষ্ঠান তদারকি করেন। তার দাওয়াতে যোগ দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও। এছাড়া অভিনেতা জাহিদ হাসান, হোমায়রা হুমি, তুষার খান, আজিজুল হাকিম, মীর সাব্বিরসহ সংগীত শিল্পীরাও অংশ নেন। পরে অনুষ্ঠিত হয় জাকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
Advertisement
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর চরে অন্তত ২০টি প্যান্ডেলে খাওয়া-দাওয়া চলছে। এর মধ্যে দুই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং তিনটি পৌর এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় আলাদা আলাদা প্যান্ডেল। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যও রাখা হয় আলাদা ব্যবস্থা। সেখানে দুই উপজেলার বিভিন্ন স্তরের সরকারি চাকরিজীবীদেরও দেখা যায়।
তবে এত মানুষকে খাওয়ানো নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন আয়োজকরা। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দেখা দেয় হট্টগোল।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি এমপি আয়েন উদ্দিন আয়োজন করেন। এতে ৩০ হাজার লোকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় রান্নাও চালিয়ে যেতে হয়। ফলে কোথাও কোথাও হট্টগোল দেখা দেয়।
পবা উপজেলার মুরারিপুর গ্রামের বাসিন্দা কুরবান আলী বলেন, খাবার নিয়ে তাদের প্যান্ডেলে হট্টগোল হয়েছে। তবে তিনি খেতে পেয়েছেন।
Advertisement
এদিকে মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪৫) জানান, প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও খেতে পাননি। তার মতো অনেকেই না খেয়ে চলে গেছেন।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল জানান, ১৪০ মণ গরু ও মহিষ এবং ২০ মণ খাসির মাংসে ১০ টন চাল এবং ২ টন ডালের বিরিয়ানি রান্না করা হয়। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এই খাবার খান। মিলনমেলা সফল করতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নেতাকর্মীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়ে উৎসব করেছেন।
তবে মিলনমেলার বিষয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এমপি আয়েনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে এমপি আয়েন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার যে আমন্ত্রণপত্র পাঠান তাতে লেখা হয়, নতুন বছর উপলক্ষে এই বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মধ্যাহ্নভোজ। এটি ‘মিলনমেলা’।
দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/এমএস