প্রথম ইনিংসের শেষ ওভারে তিন ছক্কার মারে ২৪ রান তুলেছিল রাজশাহী কিংস, দাঁড় করিয়েছিল ১৯৮ রানের বিশাল সংগ্রহ। রান তাড়া করতে নেমে নিজেদের প্রথম ওভারেই তিন ছক্কা হাঁকায় চিটাগং ভাইকিংসও। সঙ্গে এক চারের মারে ২২ রান তুলে জমজমাট লড়াইয়ের আভাসই দেয় স্বাগতিকরা।
Advertisement
প্রথম ওভারের এই মারমুখী ব্যাটিং পুরো ইনিংসজুড়েই বজায় রেখে ১৯৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যটাও খুব সহজেই তাড়া করে ফেলার পথেই ছিল ভাইকিংস। শুরুতে আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও পরে স্থানীয় তারকা ইয়াসির আলি রাব্বির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পরেও রাজশাহীর বোলারদের দুর্দান্ত স্লগ বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রানের বেশি করতে পারেনি চিটাগং।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে এসে থেমে গিয়েছিলো চিটাগং ভাইকিংসের টানা পাঁচ ম্যাচের জয়যাত্রা। বোলারদের ব্যর্থতায় ৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছিল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। বোলাররা ব্যর্থ হয়েছে রাজশাহীর বিপক্ষেও।
তবে এ ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের সাফল্যে জেতার পথেই ছিলো চিটাগং। কিন্তু কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের দুর্দান্ত স্লগ বোলিংয়ে ৭ রানের পরাজয়েই থামতে হয়েছে তাদের। ম্যাচের ১৮ ও ২০তম ওভারে যথাক্রমে ৬ ও ৫ রান খরচ করেন মোস্তাফিজ।
Advertisement
এ জয়ে 'পঞ্চপাণ্ডব বধ' সম্পন্ন হলো মিরাজের রাজশাহীর। এর আগেই পঞ্চপাণ্ডবের বাকি চার সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটানস, মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্স, সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস ও তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে হারিয়েছিলো রাজশাহী। আজ চিটাগংকে হারিয়ে ১০ ম্যাচে ৫ জয় নিয়ে সুপার ফোরে যাওয়ার পথটাও খোলা রাখলো তারা।
বিশাল রান তাড়া করতে নেমে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিলো, নিজ দলকে ঠিক তেমনটাই এনে দেন আফগান শাহজাদ। কামরুল ইসলাম রাব্বির করা প্রথম ওভারেই নিয়ে নেন ২২ রান। অপর ওপেনার ক্যামেরন ডেলপোর্ট অল্পতেই (৮ বলে ৭) ফিরলেও শাহজাদের আগ্রাসী ব্যাটে ছয় ওভারের পাওয়ার প্লে'তে ৬১ রান করে ফেলে চিটাগং।
আগেরদিনই শাহজাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় মেতেছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান করছিলেন এ আফগান ওপেনার। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত পঞ্চাশ থেকে মাত্র ১ রান দূরেই থামতে হয় তাকে।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে রাজশাহী অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজকে ছক্কা মেরে নিজের পঞ্চাশ পূরণ করতে গেলে এক্সট্রা কভারে ক্যাচে পরিণত হন শাহজাদ। তবে মাত্র ২২ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কার মারে তার ৪৯ রানের ইনিংসে শুরুর জ্বালানিটা পেয়ে যায় স্বাগতিক চিটাগং।
Advertisement
যা ধরে পরে দলকে এগিয়ে নেন আগের ম্যাচেই ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংস খেলা ইয়াসির আলি। এ ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে আসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে তার ৩৮ বলে ৫৭ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে সহজেই জয়ের পথে এগুচ্ছিলো চিটাগং।
তখনই ম্যাচ জমিয়ে তোলে রাজশাহী। ইনিংসের ১৪, ১৫ ও ১৬তম ওভারে যথাক্রমে ৩৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কার মারে ৫৮ করা ইয়াসির, ২০ বলে ১টি করে চার-ছক্কার মারে ২২ রান করা অধিনায়ক মুশফিক ও ৩ বলে ১ রান করা মোসাদ্দেক সৈকতকে সাজঘরে পাঠিয়ে চিটাগংয়ের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটিকে সমতায় আনেন আরাফাত সানি, কামরুল রাব্বি, মেহেদি মিরাজরা।
উইকেটে দুই ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা এবং নাজিবুল্লাহ জাদরানের সামনে তখনো জিততে প্রয়োজন ছিলো ২৪ বলে ৪৪ রান। মারদাঙ্গা টি-টোয়েন্টির যুগে যা খুব সহজেই করে ফেলেন ব্যাটসম্যানরা। ১৭তম ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় ঠিক ১৭ রান নিয়ে সমীকরণটা আরও সহজ করে ফেলেন সিকান্দার রাজা।
রাজশাহীর আশা বলতে তখনো ছিলো কেবল শেষ তিন ওভারের মধ্যে দুইটিই করবেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ১৮তম ওভার করতে এসে মাত্র ৬ রান খরচ করে ম্যাচ জমানোর ইঙ্গিতই দেন মোস্তাফিজ। তখন চিটাগংয়ের প্রয়োজন ১২ বলে ২১ রান।
শেষ ওভার করবেন মোস্তাফিজ, ১৯তম দেবেন কাকে? মূল বোলারদের সবারই ওভার শেষ, বাকি ছিলো কামরুল রাব্বির এক ওভার। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ ওভারটি তার হাতেই সপে দেন অধিনায়ক মিরাজ। প্রথম দুই বল ডট দিলেও তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি হজম করেন রাব্বি।
পরের দুই বল থেকে আরো চার নিলেও শেষ বলে নিজের উইকেট হারিয়ে বসেন নাজিবুল্লাহ। ফলে শেষ ওভার থেকে ১৩ রান বাকি থাকে স্বাগতিকদের। ১৪ বলে ২৯ রান করা সিকান্দার রাজার বিপক্ষে তখন বল হাতে তুলে নেন কাটার মাস্টার দ্য ফিজ।
প্রথম বলেই অসাধারণ এক ইয়র্কারে রাজার স্টাম্পস উড়িয়ে দিয়ে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন মোস্তাফিজ। শেষের পাঁচ বল থেকে দুই বোলার রবিউল হক এবং নাঈম হাসান মিলে কেবল ৪ রান করতে পারলে ৮ রানের জয় পায় রাজশাহী। মোস্তাফিজ নেন ৩ উইকেট, ২টি করে উইকেট যায় অধিনায়ক মিরাজ ও কামরুল রাব্বির দখলে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী চেহারায় হাজির হয় রাজশাহী কিংস। পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬ ওভারে সৌম্য সরকার আর লরি ইভান্স গড়েন ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে ফেরা সৌম্য সরকার ঝড় তোলার আভাস দিচ্ছিলেন। তবে ২০ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ২৬ রান করে তিনি আবারও ভুল করে বসেন। খালিদ আহমেদকে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহীমের হাতে ক্যাচ হন।
এরপর দলকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন লরি ইভান্স আর জনসন চার্লস। এই যুগল ৫৩ বলের জুটিতে যোগ করেন ৭০ রান। ২৯ বলে ৩৬ রান করা ইভান্সকেও ফেরান সেই খালিদ। অফ সাইডের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসবন্দী হন ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান।
জনসন চার্লস একটা প্রান্ত আগলে ছিলেন। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করা এই ব্যাটসম্যানকে ইনিংসের ১৭তম ওভারে এসে ফেরান আবু জায়েদ রাহি। ৪৩ বলে ৫ চার আর ২ ছক্কায় চার্লস করেন ৫৫ রান।
তবে উইকেটে আসার পর থেকেই মারমুখী ছিলেন রায়ান টেন ডেসকাট। মাঝে কয়েকটি বলে বড় শট খেলতে না পারলেও ১২ বলে ৪ ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি। আবু জায়েদের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে এসে রানআউটের কবলে পড়েন ডেসকাট।
এরপর ব্যাটে ঝড় তুলেছেন ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কার। মাত্র ১৭ বলে ১ চার আর ৩ ছক্কায় ৩৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে শেষ ওভারে এসে আউট হয়েছেন তিনি।
চিটাগং ভাইকিংসের খালিদ আহমেদ ৩২ রান খরচায় নেন ২টি উইকেট। একটি করে উইকেট ডেলপোর্ট আর আবু জায়েদের।
এসএএস/আরএস