বিশেষ প্রতিবেদন

বিএনপির না, এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর আসন্ন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্তভাবে ‘না’ বলেন তিনি।

Advertisement

তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিষয়টি কেবলই ‘বিএনপির একান্ত সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে দাবি তাদের। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা বিএনপির। জোটগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।’ এর আগেও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের সাতদিন পর ৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন গণফোরামের নির্বাচিত দুই এমপি সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান ইতিবাচক’ বলে ঘোষণা দেন। তবে পরদিন ‘ইতিবাচক মানে শপথ নিচ্ছেন, এমন কথা নয়’ বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় গণফোরাম। নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা মোহসীন মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাওয়া উচিত নয়। জাতীয় নির্বাচন দেখার পর আর কারও কোনো নির্বাচন দেখার খায়েশ নেই। বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক। কারণ যে নির্বাচন জাতি দেখল, এরপর আর নির্বাচনে যায় কীভাবে?’

‘এ বিষয়ে (মেয়র উপ-নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, নির্বাচনের সাধ আমাদের মিটে গেছে, বিশেষ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’ তাহলে কি আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন না- উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের যে চরিত্র আমরা দেখেছি, এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন যে সুষ্ঠু হতে পারে না- এটার প্রমাণ হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনেই তারা ছাড় দেয়নি, স্থানীয় নির্বাচনে তারা কি ছাড় দেবে? তারপরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ গত ১৯ জানুয়ারি ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান। আগামীকাল রোববার তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও ২৮ অথবা ২৯ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া সেল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, ঐক্যফ্রন্ট বসে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে।’ আগেই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। এখন সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা ছিল, আমিও ব্যক্তিগতভাবে তাই মনে করি। তারপরও দেখা যাক।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা জানান, নির্বাচিত সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ সুবিধা নেবে- এটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জানা ছিল। তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। কারণ নির্বাচনে যাওয়াটাও ছিল একধরনের আন্দোলন। ঐক্যফ্রন্ট সেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়।’

‘ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনে জয়ী হলে অল্প কয়েকদিনের জন্য প্রার্থী মেয়র হিসেবে থাকবেন, কিন্তু সে সময় নেতাকর্মী গ্রেফতারের আশঙ্কাও থাকবে। তাই এ নির্বাচন এড়িয়ে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ঐক্যফ্রন্ট।’

Advertisement

‘বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আবারও আলোচনা হবে’- যোগ করেন তিনি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আদালত নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। সে সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির তাবিথ আউয়ালকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২ ফেব্রুয়ারি এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া দেশের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী মার্চ মাসে।

এআর/এমএআর/এমকেএইচ/এসজি

Advertisement