উইকেট নিয়ে অনেক কথা। চার ও ছক্কার প্রদর্শনী কম। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেমন হাই স্কোরিং ম্যাচ হয়, বিপিএলে তা হয় না। এমন আক্ষেপ শোনা যায় অহরহ। তারপরও কিন্তু ‘নয়, নয়’ করতে করতে রান ঠিকই উঠছে। চার-ছক্কার ফুলঝুরিও ছুটছে।
Advertisement
সেঞ্চুরির দেখাও মিলেছে। একটি দুটি নয়, এখন পর্যন্ত তিন তিনটি শতরান হয়ে গেছে। কিন্তু তার সবগুলোই বিদেশিরা করেছেন। এবারের প্রথম শতকটি বেরিয়ে এসেছে লরি ইভান্সের ব্যাট থেকে। ২১ জানুয়ারি শেরে বাংলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৬২ বলে ১০৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেছেন রাজশাহী কিংসের ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান।
আর গতকাল রাতে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে এক ম্যাচে জোড়া শতরান করেছেন রংপুর রাইডার্সের অ্যালেক্স হেলস ও রাইলি রুশো।অথচ বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত তিন অংকে পা রাখতে পারেননি। তামিম ইকবাল, সাব্বির রহমান রুম্মন আর তরুণ ইয়াসির আলী আরাফাতের সামনে সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনজনই আশির ঘরে গিয়ে ফিরে এসেছেন।
শুধু এবার নয়, সেই ২০১৬ সালের চতুর্থ আসরের পর বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানই বিপিএলে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাকুল্যে শতরান তিনটি। সর্বশেষ সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমান রুম্মন।
Advertisement
২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর রাজশাহী কিংসের হয়ে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ২০০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৬১ বলে ১২২ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন সাব্বির।
তার আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যে দুজন সেঞ্চুরি করেছেন, তারা দুজনই এখন জাতীয় দলের বাইরে। প্রথম জন শাহরিয়ার নাফীস। দ্বিতীয় জন মোহাম্মদ আশরাফুল।
বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশের প্রথম উইলোবাজ হিসেবে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন বাঁহাতি শাহরিয়ার নাফীস। খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি খুলনারই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ৬৯ বলে ১০২ রানের দারুণ ইনিংস খেলে নিজের নামকে বিপিএলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন তিনি।
একই আসরে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি করেন মোহাম্মদ আশরাফুল (ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের বিপক্ষে ৫৮ বলে ১০৩*)।
Advertisement
কিন্তু যতই সময় গড়াচ্ছে, বিপিএলে গন্ডায় গন্ডায় শতরান হলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে সেঞ্চুরি ‘সোনার হরিণ’ হয়েই আছে। কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? বাংলাদেশের চতুর্থ সেঞ্চুরিয়ান হবেন কে? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা।
সেটা কি তামিম ইকবাল? অনেক বিচার-বিশ্লেষণে ঘুরেফিরে তামিমের নামটাই আসে সবার আগে। আজও মিডিয়ার কাছ থেকে সেই প্রশ্নই শুনলেন দেশসেরা ওপেনার।
শনিবার দুপুরে বন্দর নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অনুশীলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তামিম। তার কাছে সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্নই ছিল, অনেক কারণেই সেঞ্চুরিটি কি আপনার কাছে পাওনা হয়ে আছে?
বিনয়ী তামিমের অন্যরকম জবাব। ‘দেশি খেলোয়াড়দেরও সুযোগ ছিল। কালকের ম্যাচে ইয়াসির আলী যেভাবে ব্যাটিং করেছে তারও একটা সুযোগ ছিল। আমি যেদিন খুলনার সঙ্গে ব্যাটিং করেছি সেদিন আমারও সুযোগ ছিল।’
আসলেই চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসির আলীর সামনে খুব ভাল সুযোগ ছিল শাহরিয়ার নাফীস, আশরাফুল ও সাব্বিরের পর চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে শতরান করার।
অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ শহরের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ইয়াসির আলী। কাল শুক্রবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পর্যাপ্ত ওভার (২৫ বল) বাকি থাকতেও মাশরাফির বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিয়ে আসেন ইয়াসির।
অন্য দুই ভেন্যুর তুলনায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ ব্যাটিং বান্ধব। তা মানছেন তামিমও। তবে তার মনে হয় শেরে বাংলা ও সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পিচও ভালই ছিল এবার। তার ভাষায়, ‘সিলেটেও উইকেট ভালো ছিল। পরে ঢাকার দুটি ম্যাচেও উইকেট ভালো ব্যবহার করেছে। আর আমরা জানি যে চট্টগ্রামের উইকেট সাধারণত ব্যাটিংবান্ধব থাকে। আমার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই এটা ভালো। তবে আমি ওখানে গিয়ে যে রান করব এমন কোনো কথা নয়। আমার ইনিংস পরিকল্পনার ওপর বিষয়টা নির্ভর করে।’
তামিম ইকবালের ধারণা, লম্বা ইনিংস খেলা ছাড়া একজন ব্যাটসম্যানের উন্নতি বা অন্য উচ্চতায় আরোহন সম্ভব নয়। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমি খুলনার সাথে ৭৩ রানে আউট হবার পর বলছিলাম, নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে এই ইনিংসগুলো বড় করতে হবে। ম্যাচ শেষ করে আসতে হবে। যখন খেলা শেষ করবেন দেখবেন সেঞ্চুরি হয়ে গেছে।’
তামিমের অনুভব, টি-টোয়েন্টির ফরম্যাট ছোট। এখানে বলে কয়ে সেঞ্চুরি করা কঠিন। তাই সেঞ্চুরির সংখ্যাও কম। ব্যাটিং লাইন আপে যারা ওপরের দিকে ব্যাট করেন, তাদের সুযোগ থাকে। তার ভাষায়, ‘আমি কিংবা বাংলাদেশের কেউ যদি করে তবে সেটি অনেক বড় অর্জন হবে।’
এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ