শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রীতিমত রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন রংপুর রাইডার্সের দুই বিদেশি ব্যাটসম্যান রিলে রুশো এবং অ্যালেক্স হেলস। যার সুবাধে শীর্ষে থাকা চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৭২ রানের বিশাল জয় পেয়েছে মাশরাফির রংপুর।
Advertisement
ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন রুশো এবং হেলস। ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে হেলসের হাতে। এই দুই প্রোটিয়া এবং ব্রিটিশ ব্যাটসম্যানের এমন ব্যাটিং তান্ডবের পর ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে আসার কথা হেলস কিংবা রুশোরেই। সাংবাদিকরা এমনটা ভেবেই বসেছিলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে। এমনকি তারা সংবাদ সম্মেলনে আসলে কি জিজ্ঞাসা করবেন, কেউ কেউ সেই প্রশ্নও ঠিক করে রেখেছিলেন।
অথচ সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে হাজির হলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দল ছন্দে ফিরেছে। গেইল ডি ভিলিয়ার্স জ্বলে না উঠলেও হেলস-রুশোরা এনে দিয়েছেন স্বস্তির পরশ।
কোথায় মাশরাফির চোখমুখে থাকবে উজ্জ্বল আভা, ঠোটের কোনে সেই হাসিটা থাকবে আরো বেশি চওড়া। কিন্তু তা না, কেমন যেন কিছুটা অন্যমনস্ক তিনি। ঠোকের কোনে কোনো অব্যক্ত কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তার; কিন্তু সুযোগ কিংবা প্রসঙ্গ কোনোটাই পাচ্ছেন না বলে বলতেও পারছেন না।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনও শেষ হয়ে গেছে। মাশরাফির মুখের সেই ভাবান্তর পরিবর্তন হলো না। সংবাদ সম্মেলন স্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ই সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে তার চেহারার সেই অভিব্যক্তির বিষয়টা পরিস্কার করলেন। বললেন, ‘আরে ভাই আপনারা তো কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। আমি তো আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছিলাম, আমার অবস্থান (সাব্বির রহমান ইস্যুতে) ব্যাখ্যা করতে।’
দু’একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে প্রেস কনফারেন্স হল থেকে ড্রেসিং রুমের আগ পর্যন্ত যেতে যেতে মাশরাফি বারবার সাব্বির রহমানকে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে রাখার বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করতে চাইলেন। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘শুধু আমার ইচ্ছেতেই সাব্বির নিউজিল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পায়নি। এটা আসলে টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচক- সবার সিদ্ধান্ত। আমি শুধু মতামত দিতে গিয়ে সাব্বিরের পক্ষে যুক্তি দিয়েছি; কিন্তু আমি জোর করে সাব্বিরকে দলে নেয়ার দাবি করেছি, সেটা ঠিক নয়।’
গত বুধবার নিউজিল্যান্ড সফরের দল ঘোষণা করতে গিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স হলে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা ক্রিকেটার সাব্বির রহমানকে দলে নেয়ার কারণ হিসেবে বার বার বলেছিলেন, ‘মাশরাফির ইচ্ছেতেই দলে নেয়া হয়েছে সাব্বিরকে। মাশরাফি অনুরোধ করেছেন বলেই দলে নিয়ে আসা হয়েছে সাব্বির রহমান রুম্মনকে।’
প্রধান নির্বাচনের ওই বক্তব্যের পরই সাব্বির রহমানকে দলে নেয়ার পুরো দায়ভার চলে যায় মাশরাফির ওপর। মাশরাফি নিজেও খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করছেন, নিষিদ্ধ সাব্বিরকে নিউজিল্যান্ড সফরে নেয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, তার (মাশরাফির) ইচ্ছেতেই আসলে সাব্বির দলে ফিরেছে।
Advertisement
অথচ, বিষয়টা পুরোপুরি তেমন নয়। মাশরাফি মনে করেন বিষয়টি আরও খোলসা হওয়া দরকার। যদিও এ বিষয়ে একটি সহায়ক অনলাইনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অনেক কথাই বলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবুও চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে রুশো কিংবা হেলসকে সংবাদ সম্মেলনে না পাঠিয়ে মাশরাফি এসেছিলেন সাব্বির ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে।
শুক্রবার রাতে মাশরাফির কথা শুনে ও শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো তিনি চান সাব্বির ইস্যুতে তার অবস্থানটা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। তিনিই যে যেচে সাব্বিরকে দলে নিতে চাননি কিংবা শুধু তার ইচ্ছেতেই যে সাব্বির নিউজিল্যান্ডগামি দলে আসেনি, এটা সবার জানা প্রয়োজন।
সাব্বিরকে দলে নেয়াটা ছিল একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকরা- সবাই মিলেই সাব্বিরকে দলে নিয়েছেন এবং অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি শুধু তার মতামত দিয়েছেন। যুক্তি উপস্থাপন করেছেন কেন, সাব্বিরকে দলে রাখা প্রয়োজন। এর প্লাস-মাইনাস দুই দিকই তিনি তুলে ধরেছেন। এর বেশি কিছু নয়।
মাশরাফির ধারণা, সবাই ধরেই নিয়েছেন তিনিই সাব্বিরকে দলে নিতে মরিয়া। তার ইচ্ছেতেই আবার জাতীয় দলে সাব্বির। বিষয়টা মোটেও ঠিক নয়। ওই ধারণা পোষণকারীদের জন্যই আসলে মাশরাফি সাব্বির বিষয়ে আরও বড় পরিসরে কথা বলতে মুখিয়ে ছিলেন। সে জন্যই তিনি এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে এবং সেখানে কথা বলতে না পারলেও পরে ড্রেসিংরুমে যেতে যেতে সাংবাদিকদের জোর দিয়ে বলেছে যে, সাব্বিরকে দলে নিতে আমি কোনো পীড়াপীড়ি করিনি।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি