পথশিশুরা সমাজের বোঝা নয়। ওদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে আলোকিত হতে পারে সমাজ। আঁধার থেকে আলোর মাঝে ফিরে আসতে পারে ওদের জীবন। শুধু দরকার সবার সমন্বিত প্রয়াস। ‘মুক্তির জন্য শিক্ষা’ নামের সংগঠনটি সেই কাজই করে আসছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আসাদুল ইসলাম দুলাল-
Advertisement
ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। রাজধানীর সাতরাস্তায় ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম। কানে ভেসে আসে চেঁচামিচির আওয়াজ। একটু কাছে যেতেই দেখা মেলে একটি ফিলিং স্টেশন। সেখানেই নিয়ন আলোর মধ্যে কয়েকজন শিশু পাঠ করছে বাংলা স্বরবর্ণ অ, আ ইত্যাদি। শিশুদের পড়ার আওয়াজই বলে দিচ্ছে, তারা শিক্ষার প্রতি কতটা মনযোগী।
এসব শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও পথশিশু বলে তারা শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগও পায় না। সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে চাইলেও ভর্তি করা হয় না। তাই বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় এভাবে পড়ালেখা করছে তারা।
রুমি নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সে দিনের বেলায় ফুল বিক্রি করে আর রাতে এখানে এসে পড়ালেখা করে। তার খুব ইচ্ছে, বড় হয়ে দেশের সেবা করবে।
Advertisement
> আরও পড়ুন- স্কাউটিংয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাকিব
আরেক ছাত্র মজিদুল বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়। শিক্ষক হয়ে গরিবদের বিনামূল্যে পড়ানোর স্বপ্ন তার। মজিদুল বলে, আমার পড়ালেখা করতে ভালো লাগে। তাই সারাদিন কাজ করেও সন্ধ্যায় জিহাদ স্যারের কাছে পড়তে আসি।
শান্ত নামে আরেক ছাত্র জানায়, সে সারাদিন গ্যারেজে কাজ করে। তার অভিযোগ, স্কুলে পড়তে গেলে পথশিশু বলে ভর্তি করাননি শিক্ষক। তাই এখানে পড়ালেখা করে সে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এমন স্কুলের দেখা মেলে পান্থপথ, হাতিরপুল, ধানমন্ডি লেক, তেজগাঁও রেলস্টেশনসংলগ্ন এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে। শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ না পাওয়া শিশুদের এসব ভাসমান স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষা দেন সমাজকর্মীরা।
Advertisement
তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ের তেমনি একটি ভাসমান স্কুলের নাম ‘মুক্তির জন্য শিক্ষা’। এই স্কুলের সমন্বয়ক জিহাদ আরিফ। পেশায় বেসরকারি টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পথশিশুরা আমাদের সমাজে অবহেলিত। তারা রাজধানীর কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। তাই এদের শিক্ষা দিতে স্বেচ্ছায় এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
> আরও পড়ুন- অভাবের সংসারেও পাঠশালা চালাচ্ছেন সুব্রত
জিহাদ জানান, তিন বছর যাবৎ এ শিক্ষাদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তিনি। এখানকার শিশুরা সবাই বিভিন্ন কাজ করে খাবার জোগাড় করে। সেইসঙ্গে এখানে পড়তেও আসে।
তিনি আরও জানান, তার লক্ষ্য এ অবহেলিত, হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যেন শিক্ষার ন্যূনতম শিক্ষাটা পায়। তারা যেন বুঝতে পারে কোন জিনিস ভালো, কোন জিনিসটা মন্দ।
জিহাদ আরিফ জানান, স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেলে সেখানকার প্রধান শিক্ষক অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের দাবি, ওরা মারামারি করলে দায় নেয়ার মতো কোনো অভিভাবক নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পথশিশুদের শিক্ষার বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সরকারের দেয়া অবৈতনিক শিক্ষার যে সুযোগ রয়েছে তার আওতায় এদেরকে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা ঠিক হবে না।’
এসইউ/জেআইএম