এটাকে কি বলবেন? বিলম্বিত উপলব্ধি? নাকি দেখে ও ঠেকে শেখা? যাই বলা হোক না কেন, আসল সত্য হলো-অনেক দেরিতে হলেও অভিজ্ঞ, পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমার অলক কাপাালিকে অধিনায়ক করে সাফল্যের দেখা পেল সিলেট সিক্সার্স।
Advertisement
আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংসকে ৭৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে শুভ সূচনা করলো সিলেট সিক্সার্স। কাজেই সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি ও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে অলক কাপালি ধন্যবাদ আশা করতেই পারেন।
এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে আহামরি কিছুই করেননি। সে অর্থে কোন বিধ্বংসী কিংবা নজর কাড়া ব্যাটিং নৈপুন্য নেই। তবে বল হাতে লেগস্পিনার অলক মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করছেন। প্রায় ম্যাচে উইকেটও পাচ্ছেন। নয় খেলায় ১০ উইকেট শিকারি লেগি অলক।
এইতো দুদিন আগে ঢাকায় খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৪ উইকেট (২২ রানে) শিকার করে রীতিমত সাড়া জাগিয়েছেন। আজও রাজশাহীর বিপক্ষে অলকের নামের পাশে জমা পড়েছে দুই উইকেট।
Advertisement
ক্যারিয়ারের সূর্য যখন মধ্য গগনে ছিল, তখনো খুব বড় টার্নার ছিলেন না। বল ঘুরতো কম। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে টেস্টে বোলার অলক কাপালির নাম লেখা আছে। থাকবে অনন্তকাল। কারণ, বাংলাদেশের টেস্টে প্রথম হ্যাটট্রিক করা বোলার তিনি।
তবে সেটা অনেক আগের কথা। এখন বলের ধার আগের মত নেই। বল ঘুরছে কম। কিন্তু অভিজ্ঞ অলক বুদ্ধি খাটিয়ে ঠিক জায়গামত বল ফেলার চেষ্টা করছেন। শর্ট বল কম করে যতটা গুডলেন্থে বল ফেলে যাচ্ছেন। কখনো সোজা ডেলিভারি ছুঁড়েও উইকেট পাচ্ছেন। তাতে কাজও হচ্ছে। প্রায় খেলায় উইকেট পাচ্ছেন। তার সমসাময়িক অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। সমবয়সীদের বেশির ভাগই বিপিএলেও নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন না। সেখানে অলক সব ম্যাচ খেলছেন। দেরিতে হলেও অধিনায়ক হলেন। দলও তার নেতৃত্বে পেলো বড় জয়।
এই সাফল্যর পিছনের কাহিনী কি? অলক লেগস্পিন বোলিংটা কিভাবে মেইনটেইন করেন? আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রাজশাহী কিংসকে হারিয়ে প্রেস কনফারেন্সে এসেও ঐ প্রশ্নর মুখোমুখি হলেন অলক ।
জবাবে একটা ব্যাখ্যা দিলেন। তার সারমর্ম হলো, নিজের চেষ্টাটা আছে। লেগস্পিনারের পরিচয়টা থাকুক, এই চিন্তাটা ভেতরে লালন করেন। এবং তার খুব ভাল জানা, বাড়তি প্র্যাকটিস আর চর্চা না থাকলে লেগস্পিন বোলিংয়ের ছন্দটা থাকবে না।
Advertisement
তাই প্রিমিয়ার লিগে যখন যে দলে খেলেন, সেই দলের অধিনায়কের সাথে নিজের বোলিংটা চালিয়ে যাবার কথা আলাপ করেন। কাপালি বলেন, ‘আমি আসলে প্রিমিয়ার লিগে চেষ্টা করি নিয়মিত। যখন যে আমার ক্যাপ্টেন থাকে, আমি চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেয়ার। যেমন এবারের বিপিএলেও আমি নিয়মিত প্র্যাকটিস করেছি। মনোযোগ দিয়ে নিবিড় ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করেছি। সব সময় ভাবি আমাকে লড়াই ও সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য থাকে।’
প্রায় সব ক্রিকেট শক্তি এখন লেগস্পিনারে ভরা। ভারত তো প্রথাগতভাবেই স্পিনারের খনি। আজকাল দক্ষিণ আফ্রিকা (ইমরান তাহির), পাকিস্তান (ইয়াসির শাহ, শাদাব খান), আফগানিস্তানে রশিদ খান আর রহমত শাহ আর মুজিব উর রহমান এমনকি নেপালেও আছেন সন্দীপ লামিচানের মত বিশ্ব মানের লেগস্পিনার।
আফগান লেগি রশিদ খানের স্পিন ভেলকির কাছে বার বার ধরা খাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনিই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। বিশ্ব মানের কোয়ালিটি স্পিনার বহুদূরে, বাংলাদেশে নেই কোন লেগস্পিনার।
জাতীয় দল লেগস্পিনার শূন্য বহুদিন। অনেক বছর। একজন দক্ষ ও কার্যকর লেগস্পিনারের অভাবে ভুগছে টিম বাংলাদেশ। কেন বাংলাদেশ লেগস্পিনার পাচ্ছেনা? কি কারণে কোয়ালিটি লেগস্পিনার উঠে আসছে না? এ প্রশ্নর মুখোমুখি হয়ে অলক কাপালি একটি নির্জলা সত্য কথা বলে ফেলেছেন।
তার কথার ভাবটা এমন, আমাদের দেশে লেগস্পিনার উঠে আসবে কি করে? আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগস্পিনাররা সে অর্থে অনাদর অবহেলার পাত্র।
আর সে কারণেই মুখে একথা, ‘আমি মনে করি আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগস্পিনারদের সুযোগ দেয়া হয় না। আমাদের লেগস্পিনার আছে। ওদেরকে যত সুযোগ দেয়া হবে, তত বেশি ভাল করবে।’
অলকের বিশ্বাস, লেগস্পিনাররা গেম বদলে দিতে পারেন। ম্যাচ নির্ধারক হতে পারেন। তার ভাষায়, ‘একজন লেগি যদি চেষ্টা করে তাহলে একটা খেলার চালচিত্র পাল্টে দিতে পারে। যেটা আজকাল প্রায় দেশে সব দলেই একাধিক লেগির দেখা মিলছে। কিন্তু আমাদের দেশে সে অর্থে লেগস্পিনাররা সুযোগ পায় কম।’
অলকের শেষ কথায় আছে একটি বড় বার্তা, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগস্পিনারদের আরও বেশি করে সুযোগ দিতে হবে। ’ মানে বেশি সুযোগ দিলেই মান সম্পন্ন লেগস্পিনার উঠে আসবে।
এআরবি/এমএমআর/আরএস