২০১৭ সালের তুলনায় দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ২০১৮ সালে কমলেও তার পরিমাণ উল্লেখ করার মতো নয়। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ২২১ জন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।
Advertisement
২০১৭ সালে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭ হাজার ৩৯৭ জন। আহত হন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। তবে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বেশি। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ৫৫ জন। আহত হন ১৫ হাজার ৯১৪ জন।
এসব দুর্ঘটনার পেছনে ১২টি সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে (ভিআইপি লাউঞ্জ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলেন ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
Advertisement
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে রেলপথে ঘটেছে ৩৭০টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা যান ৩৯৪ জন, আহত হন ২৪৮ জন। নৌপথে ১৫৯টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন। আকাশপথে ৫টি দুর্ঘটনায় ৫৫ জন নিহত এবং ৩২ আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশপথে সম্মিলিতভাবে ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ
১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো
২. বিপজ্জনক ওভারটেকিং
Advertisement
৩. রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি
৪. ফিটনেসবিহীন যানবাহন
৫. যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা
৬. চালকের অদক্ষতা
৭. চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার
৮. মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো
৯. রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা
১০. রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা
১১. ওভারলোড এবং
১২. ছোট যানবাহন বৃদ্ধি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যাত্রীকল্যাণ সমিতির ১২ দফা সুপারিশ
১. ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
২. টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
৩. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা।
৪. রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা।
৫. গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৬. যাত্রী ও পথচারীবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধি প্রণয়ন।
৭. গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৮. জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন এর ব্যবস্থা করা।
৯. অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
১০. সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনপূর্বক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
১১. লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে চালকদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা।
১২. পর্যাপ্ত মানসম্মত গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, ফ্যামিলিজ ইউনাইটেড অ্যাগেনিস্ট রোড অ্যাক্সিডেন্ট (এফইউএআরএ) এর প্রধান এবং সাবেক পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, বিএফইজের সহ-সভাপতি ইশতিয়াক রেজা, বিশিষ্ট সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।
জেইউ/এসআর/এমএস