আচ্ছা বলুন তো, বাংলাদেশের কোন বিভাগ বা জেলা শহরে সর্বাধিক ক্রিকেটার তারকার জন্ম হয়েছে? ভাবছেন সারা বছর যে ক্রীড়াকেন্দ্রে খেলা হয় সেই রাজধানী ঢাকা থেকেই বুঝি সবচেয়ে বেশী ক্রিকেট তারকা উঠে এসেছেন। না ধারণাটা ঠিক নয়। সংখ্যার বিচারে সর্বাধিক তারকা ক্রিকেটারের শহর হলো চট্টগ্রাম।
Advertisement
একজন-দুজন না। গন্ডায় গন্ডায় ক্রিকেট তারকার জন্ম দেয়া শহর চট্টগ্রাম। মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, নুরুল আবেদিন নোবেল, শহিদুর রহমান শহিদ, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ আর তামিম ইকবালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বন্দর নগরীতে।
চট্টগ্রামবাসীর ক্রিকেট প্রেমও প্রবল। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা- পাকিস্তান কিংবা জিম্বাবুয়ে- যার সাথেই খেলা হোক না কেন, টিম বাংলাদেশের খেলা থাকলেই চট্টগ্রামে অন্যরকম সাড়া পড়ে। এম এ আজিজ কিংবা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্রিকেট অনুরাগির ঢল নামে। বাংলাদেশের প্রায় ম্যাচেই দেখা মেলে দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামের।
কিন্তু সে তুলনায় বিপিএল তেমন একটা সাড়া জাগায় না। এ ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর উৎসাহ-উদ্দীপনাও তুলনামূলক কম। কারণটা খুবই পরিষ্কার। বিপিএলে চট্টগ্রামের সাফল্য নেই একদমই। ঢাকা, কুমিল্লা ও রংপুর ইতিমধ্যে শিরোপার স্বাদ পেলেও চট্টগ্রাম এখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। নিজ বিভাগীয় দলের সাফল্য কম বলেই বিপিএল নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার সে ধারার ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে।
Advertisement
আজ থেকে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিপিএলের যে পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে বন্দর নগরবাসীর উৎসাহ প্রবল। জানা গিয়েছে খেলা দেখার উৎসাহি ক্রিকেট অনুরাগির সংখ্যা আগের পাঁচবারের চেয়ে অনেক বেশী। টিকিট বিক্রির ধুম পড়ে গিয়েছে।
কারণ একটাই, চট্টগ্রাম এবার ভাল খেলছে। আগের সেই আগের তলানিতে থাকা চট্টগ্রাম নেই এবার। অতীতের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে চিটাগং ভাইকিংস বেশ ভাল ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে। সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে অবস্থান করছে। ইতিহাস জানাচ্ছে, আগের পাঁচ আসরে কখনো এতটা ভাল অবস্থান ছিল না চট্টগ্রামের।
এবার মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে রবি ফ্রাইলিংক, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহীরা মিলে চিটাগং ভাইকিংসকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। যে দলে ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারের মত বিশ্বতারকা না থাকলেও যে বিপিএলে ভাল খেলা যায়, সব দলের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নেয়া সম্ভব- এবার তা দেখিয়েছে চিটাগং ভাইকিংস।
তাদের মূল শক্তি হচ্ছে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অনেক তারকায় ঠাসা দলে তারকা নির্ভরশীলতা ছিল প্রবল। কিন্তু চিটাগং ভাইকিংসে তা দেখা যায়নি। এ দলটি খেলেছে ১১ জনের প্রাণপন চেষ্টায়। পুরো দল যেন একটা পরিবার। বিভিন্ন দলে এক বা দুই ম্যাচ পরপর একাদশ ও ব্যাটিং লাইন আপে রদবদল হয়েছে।
Advertisement
কিন্তু চিটাগং ভাইকিংস সে জায়গায়ই ব্যতিক্রম। শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত হাতে গোনা একটি বা দু’টি পরিবর্তন হয়েছে। দলটির ম্যানেজমেন্ট মূলত একটি কম্বিনেশন ধরে আগানোর চেষ্টা করেছে। তাতে করে ক্রিকেটারদের আস্থা-আত্ববিশ্বাসটা অটুট থাকছে। মাঠের পারফরমেন্সও বাড়ছে। এবার দলটির নৈপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এছাড়া টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্ট কোচ সায়মন হেলমটও চিটাগং ভাইকিংসকে একটা ইউনিট হিসেবে গড়ে থাকতে রাখছেন কার্যকর অবদান। সব মিলে এবার চিটাগং ভাইকিংস অন্যরকম এক দল।
চট্টগ্রামের সোনার ছেলে এবং দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটিং তারকা মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবার চিটাগং ভাইকিংসের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার। নিজ শহরে বিপিএলের এবারের পর্বে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে থেকেই মাঠে নামবে চিটাগং ভাইকিংস মিনহাজুল আবেদিন নান্নু তাই পুলকিত, রোমাঞ্চিত।
তাই তো আজ সকালে টিম হোটেলে বসে জাগোনিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে তার ভাষ্য, ‘এটা খুবই ভাল লাগছে যে এই প্রথম আমরা ভাল খেলে, সাত ম্যাচে ছয় ম্যাচ জিতে চট্টগ্রামে খেলতে এসেছি। আগের বার আসতাম তলানিতে থেকে। প্রায় প্রতিবার আমাদের অবস্থান থাকতো নীচের দিকে। আর এবার আমাদের চিটাগং ভাইকিংস মানে চট্টগ্রামের নামটা সবার ওপরে, খুব স্বাভাবিকভাবেই চট্রগ্রামবাসী এবার খুশি। আমার ধারণা, সবাই মাঠে গিয়ে প্রিয় দলের খেলা দেখার উৎসাহ ও আগ্রহ বেড়েছে। আমি অনেক উদ্দীপনাও লক্ষ্য করছি সবার মাঝে।
নান্নুর বিশ্বাস দলে সে অর্থে খুব নামী-দামি তথা বিশ্ব তারকা না থাকলেও যারা আছেন তারা সবাই সামর্থের সবটা উজার করে দিয়ে খেলছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দলের পারফরমেন্সের গ্রাফ আছে ওপরের দিকে। এছাড়া মুশফিক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকান রবি ফ্রাইলিংক শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে প্রায় ম্যাচেই কার্যকর অবদান রাখছেন। সেটাও এবার দলের বড় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন নান্নু।
এছাড়া চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসির আলী রাব্বিও এবার ভাল খেলছেন। এরই মধ্যে একটি পঞ্চাশ ও চল্লিশোর্ষ ইনিংস খেলে ফেলেছেন এ তরুণ। চট্টগ্রামের এক সম্ভাবনাময় তরুণ এবারের বিপিএলে নিজ বিভাগীয় দলের হয়ে ভাল খেলছেন। এটাকেও একটা বড় প্রাপ্তি ও ইতিবাচক দিক মনে করছেন নান্নু।
সব মিলে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নান্নু এখন পর্যন্ত দলের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট। এখন তার লক্ষ্য সুপার ফোর নিশ্চিত করা। তার আশা চট্টগ্রামেই সুপার ফোর নিশ্চিত করবে চিটাগং ভাইকিংস। তাইতো মুখে এমন আশাবাদি সংলাপ, ‘আমাদের আর একটি ম্যাচ জিতলেই হয়ত সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে যাবে। আমরা চট্টগ্রামেই তা করার আশায় আছি।’
সুপার ফোর নিশ্চিত করার মিশনে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনেই মাঠে নামবে চিটাগং ভাইকিংস। তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স। মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের বিপক্ষে প্রথম দেখায় ৩ উইকেটে জয় পেয়েছিল মুশফিকের চিটাগংই। এবার দ্বিতীয় সাক্ষাতেও প্রথমবারের পুনরাবৃত্তিই করতে চাইবে স্বাগতিকরা।
এআরবি/এসএএস/এমএস