আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। প্রতি তিন বছর পর পর বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।জানা গেছে, এ নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এরই প্রেক্ষিতে রোববার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচ তলায় ভোটার তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। আইনজীবীরা তাদের নিজ নিজ নামের তালিকা দেখছেন।বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র, দেশের সকল জেলা সদরের দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গনে ভোটকেন্দ্র এবং বাজিতপুরসহ দেশের ১২ উপজেলা পর্যায়ে ভোট গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রগুলোতে সকল দেওয়ানি আদালতের বিচারকগণ প্রিজাইডিং অফিসারে দায়িত্ব পালন করবেন।বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা দায়রা জজ) মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন জগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার নিবার্চনী সকল সরঞ্জাম প্রত্যেক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি আগামী বুধবার (২৬ আগস্ট) সারাদেশের ৭৭টি কেন্দ্র ভোটাররা মনোরম পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন।এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেল এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন নীল প্যানেলের প্রার্থীরা ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুন নিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন, দিচ্ছেন বার কাউন্সিলের নানা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি টেলিফোন, এসএমএস, ভয়েস কল এবং ফেসবুকের মাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছেন তারা।নির্বাচনে সরকার সমর্থিত ও আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ (সাদা) প্যানেলে এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আইনজীবীরা ঐক্য (নীল) প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে চারটি প্যানেল থাকলেও মূলত দুটি প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।তবে এবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জয় পাওয়ার জন্য সরকার সমর্থিত মহাজোট নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বাধীন বিএনপি উভয় মরিয়া। কারণ গত বছর মাত্র সাধারণ সদস্যের একটি পদ বাদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবকটি পদে ভরাডুবি হয়েছিল। কিন্তু এবার তারা সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে আইনজীবীদের কাছে ভোটার টানছেন এবং সাঁড়া পাচ্ছেন বলে সরকারি দলের আইনজীবী রেজাউল করিম জানান।তিনি বলেন, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হওয়ার পর বার কাউন্সিল জয়ের জন্য সারাদেশে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা বার কাউন্সিলের আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে দেশ জুড়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারে নেমেছে।এর আগে বার কাউন্সিল ঘোষিত সংশোধিত তফসিল অনুসারে ২০ মে এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। গত ১৭ মে বার কাউন্সিলের নির্বাচন স্থগিত ও বার কাউন্সিল আইন (সংশোধন) ২০০৩ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট করেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২১ মে হাইকোর্টের বেঞ্চ বার কাউন্সিল নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ বার কাউন্সিলের নির্বাচন জন্য ২৬ আগস্ট পুনঃনির্ধারণ করেন। পরে ৫ আগস্ট বার কাউন্সিল নির্বাচনের ভোটার তালিকা আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।জানা যায়, সাদা ও নীল এবং গোলাপী প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারে নেমেছেন। প্যানেলের পক্ষে নিজ নিজ সমর্থকরা ভোট চাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্যানেল পরিচিতি, ব্যক্তিগত পরিচিতি, বারের অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান ও নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির লিফলেট ও ব্যানার আদালত পাড়ায় বিতারণ করছেন। এছাড়াও প্যাানেল পরিচিতির ছবিসহ বড় বড় ব্যানার আদালত পাড়ার বিভিন্ন দেয়ালে টাঙানো হয়েছে।আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা জানান, সিনিয়র আইনজীবীরা প্রচারের কাজে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরছেন। প্রচারের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইমপেরিয়াল হোটেলে ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের এক্স মেম্বারস ক্লাব আয়োজিত স্মরণসভায় সরকার দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোট চান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। একইসঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে আইনজীবীদের নিজেদের মধ্যকার ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও জোর অনুরোধও করেন তিনি।এক প্রার্থী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সব নেতাদের নিয়ে বসে এবারের প্যানেল ঠিক করে দিয়েছেন। এজন্য নানা পরিকল্পনা বিচার-বিশ্লেষণ করে গ্রুপভিত্তিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।বিএনপি সুত্রে জানা যায়, বিএনপি সিনিয়র আইনজীবীরা ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিভাগে ও জেলায় জেলায় প্রচারে নেমেছেন। বিভিন্ন জেলায় আইনজীবী ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। নির্বাচনে জয়ী হতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।সাধারণ আসনে প্রার্থী বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, নিবার্চন কেন্দ্র আমাদের সাতটি দলে বিভ্ক্ত হয়ে কাজ করছে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, যশোর, নারায়ণগঞ্জসহ বড় বড় জেলাগুলোতে প্রচার চালিয়েছেন। আমরা ভোটারদের কাছে সাড়া পেয়েছি আশা করি আমাদের প্যানেল জয়ী হবে।আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ-এর সাদা প্যানেল থেকে সাধারণ আসনে ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম (ব্যালট নং-১৬), আব্দুল বাসেত মজুমদার (ব্যালট নং-২), আব্দুল মতিন খসরু (ব্যালট নং-৩), ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ (ব্যালট নং-২৭), পরিমল চন্দ্র গুহ (ব্যালট নং-১৩), জেড আই খান পান্না (ব্যালট নং-১০), শ ম রেজাউল করিম (ব্যালট নং-২৮) প্রার্থী হয়েছেন।সাদা প্যানেল গ্রুপ-এ কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু (ব্যালট নং-২), গ্রুপ-বি আলহাজ এইচ আর জাহিদ আনোয়ার (ব্যালট নং-১), গ্রুপ-সি মো. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী (ব্যালট নং-৩), গ্রুপ-ডি সারওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল (ব্যালট নং-৫), গ্রুপ-ই পারভেজ আলম খান (ব্যালট নং-৩), গ্রুপ-এফ মো. ইয়াহিয়া (ব্যালট নং-৩) ও গ্রুপ-জি মো. রেজাউল করিম-১ (ব্যালট নং-৫) প্রার্থী হয়েছেন।অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের ঐক্য নীল প্যানেলের সাধারণ আসনে রয়েছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন (ব্যালট নং-৯), এ জে মোহাম্মদ আলী (ব্যালট নং-১), এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (ব্যালট নং-৭), মো. সানাউল্লাহ মিয়া (ব্যালট নং-২৫), মো. বদরুদ্দোজা বাদল (ব্যালট নং-২০), মো. বোরহানউদ্দিন (ব্যালট নং-৬), মো. মহসিন মিয়া (ব্যালট নং-২১) নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।গ্রুপ-এ গোলাম মোস্তফা খান (ব্যালট নং-৩), গ্রুপ-বি মো. আবদুল বাকী মিয়া (ব্যালট নং-৩), গ্রুপ-সি কবির চৌধুরী (ব্যালট নং-২), গ্রুপ-ডি কাইমুল হক রিংকু (ব্যালট নং-৩), গ্রুপ-ই আব্দুল মালেক (ব্যালট নং-২), গ্রুপ-এফ মো. ইসহাক (ব্যালট নং-২) ও জি থেকে একেএম হাফিজুর রহমান (ব্যালট নং-১) প্রার্থী হয়েছেন।আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত ছাড়া নিরপেক্ষ আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট-এর গোলাপী প্যানেল থেকে সাধারণ আসনে সুব্রত চৌধুরী (ব্যালট নং-৩১), আলহাজ শাহ মো. খসরুজ্জামান (ব্যালট নং-২৯), একেএম. জগলুল হায়দার আফরিক (ব্যালট নং-০৮), আব্দুল মোমেন চৌধুরী (ব্যালট নং-০৪), সারওয়ার-ই-দীন (ব্যালট নং-৩০), মো. হেলাল উদ্দিন (ব্যালট নং-২৬), মো. শামছুল হক (ব্যালট নং-২৪) প্রার্থী হয়েছেন।অপর একটি প্যানেলের নাম আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। যার নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। কিন্তু তিনি তাদের প্রার্থীদের ব্যালট নাম্বার বলতে পারেননি।বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর ১৪ জন আইনজীবীর সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবার বারকউন্সিলের মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০২ জন। জাল ভোট প্রতিরোধে ভোটকেন্দ্রে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিজ আইনজীবী সমিতির পরিচয়পত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।সাধারণ আসনে সাত এবং সাতটি গ্রুপ আসনে প্রত্যেক এলাকার স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাত জনকে নির্বাচিত করবেন। ভোটের দিন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের সকল জেলা সদরে দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণে একটি করে ভোট কেন্দ্র থাকবে।এছাড়া বাজিতপুর, ইশ্বরগঞ্জ, দুর্গাপুর, ভাঙ্গা, চিকন্দি, পটিয়া, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি, সদ্বীপ, হাতিয়া, নবীনগর ও পাইকগাছাসহ ৭৭টি কেন্দ্রে ভোট প্রদান করা যাবে।এফএইচ/বিএ
Advertisement