বাংলায় বলা হয় সূর্যশিশির (মাংসাশী উদ্ভিদ), ইংরেজি নাম Sundews Plant, সংস্কৃতির ভাষায় দেবাবিন্দু, যার আরেক নাম মুখাজালি, বৈজ্ঞানিক নাম- Drosera Rotundifolia। এটি Carzophzllales বর্গ ও Droseraceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। জন্মায় অম্লতা (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে। আর তারই নমুনা দিনাজপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ‘সূর্যশিশির’।
Advertisement
উদ্ভিদটির রয়েছে ঔষধি গুণ, পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গ খেলেও উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এ কারণে উপকারী পোকার ক্ষতি করতে পারে না এরা।
দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ‘সূর্যশিশির’ উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়ার পর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ উৎসুক জনতা এক নজর দেখতে ভিড় করছেন।
১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে সংরক্ষিত পুকুরপাড়ের পশ্চিম পাড়ে বিলুপ্তপ্রায় পতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’ নামে এক উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ প্রজাতিটির শনাক্ত করেন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। এখানে তিনটি গাছের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সংরক্ষণ ও বিস্তর গবেষণার জন্য তিনটি উদ্ভিদের মধ্যে দুটি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে রাখা হয়েছে। গবেষণাও চলমান রয়েছে।
Advertisement
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসি (শেষ বর্ষ) শিক্ষার্থী মো. মোসাদ্দেক হোসেনসহ শিক্ষার্থীরা মাংসাশী এ উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা চলমান রেখেছেন।
সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, গোলাকার সবুজ থেকে লালচে রঙের থ্যালাসের মতো মাটিতে লেপ্টে থাকা উদ্ভিদটি মাংসাশী উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি। এই উদ্ভিদটির রয়েছে ঔষধি গুণ। পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গ খেলেও উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায় এরা জন্মায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে।
এদিকে দিনাজপুরের মাটিতে অম্লতা (গ্যাস) বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মামুন আল আহসান চৌধুরী।
তিনি জানান, মাটির পুষ্টিগুণ উর্বরতা ঠিক থাকার জন্য যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন হয় এর মধ্যে ৯টি উপাদানের ঘাটতি আছে দিনাজপুরের মাটিতে। ফলে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে দিনাজপুর জেলা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো জানান, ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সদৃশ উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জরি হয়। সংখ্যায় ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা সদৃশ মাংসাল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংসাল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু। পাতাগুলো মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক এক প্রকার এনজাইম নির্গত করে। এনজাইমে পোকা পড়লে আঠার মতো আটকে রাখে। শীতের সকালে পড়া শিশিরে চকচক করে উদ্ভিদটি, তাতেও পোকারা আকৃষ্ট হয়। পোকামাকড় উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায়।
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর রহমান জানান, উদ্ভিদটি এবারই প্রথম নয়, প্রথমবার ক্যাম্পাসে শনাক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ রজব আলী মোল্লা এটি শনাক্ত করেন। উপযোগী পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভিদটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/আরআইপি