বিশেষ প্রতিবেদন

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কোনো দুঃখ-ব্যথা নেই

শাজাহান খান, এমপি। সাবেক মন্ত্রী। শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন, চলমান রাজনীতি, উন্নয়ন-গণতন্ত্র প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র।

Advertisement

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার প্রতি জনমানুষের আস্থা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারা এবারের নির্বাচনে বিজয়ের প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে- এমনটি উল্লেখ করেন এই রাজনীতিক। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।

জাগো নিউজ : টানা ১০ বছর মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করে এবার বাদ পড়লেন। নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?

শাজাহান খান : প্রধানমন্ত্রী একজন দক্ষ ও পরিপক্ব রাজনীতিবিদ। চারবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা জানেন, কাকে দিয়ে কী কাজ করা যাবে। স্বর্ণকার যেমন সোনা চেনেন, তেমনি শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের চেনেন।

Advertisement

গত ১০ বছরে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ আনতে পারবেন না। দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি নতুনদের জায়গা দিয়ে বিশেষ চমক দেখিয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও দ্বিতীয় সারির সৈনিক রাখা হয় নিরাপত্তার জন্য। রাজনীতিতেও ঠিক তাই।

আওয়ামী লীগ বিশাল একটি রাজনৈতিক দল। এই দলের বহু নেতাকর্মী আছেন, যারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতে পারেন। দেশ-জাতির প্রতি দায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দলের নেতারা তৎপর। সরকার পরিচালনা করতে গিয়েও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার্থে আন্দোলন করতে হয়েছে। সময়ের দাবি হচ্ছে, সরকারবিরোধী শক্তিকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংঘবদ্ধ হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির এই ধারা সৃষ্টি করতে চাইছেন।

জাগো নিউজ : অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেও অনেক অসঙ্গতি তৈরি করেছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী…

শাজাহান খান : কথাটি সত্য নয়। আওয়াম লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে জঙ্গিবাদের আর কোনো বিস্তার ঘটছে না। দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। জ্বালানি সমস্যার সমাধান হচ্ছে। প্রধান সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।

Advertisement

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন মাত্র। সুতরাং নতুন মন্ত্রিসভা গঠনও প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিফলন বলে মনে করি। নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা দিনেদিনে দক্ষতা অর্জন করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশা রাখি। জাগো নিউজ : অভিজ্ঞদের বেশির ভাগই বাদ পড়লেন। এতে বিশেষ কোনো সংকট তৈরি হতে পারে কিনা? শাজাহান খান : আমার মনে হয় না নতুন মন্ত্রিসভা কোনো সংকটে পড়বে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থাকে। স্থায়ী কমিটি একটি শক্তিশালী বডি। মন্ত্রীকে এই কমিটির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী যদি বাদ পড়া অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেন, তাহলে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। এতে মন্ত্রণালয়ের গতি আরও সঞ্চার হবে।

জাগো নিউজ : আপনি কি মনে করেন, এমন মন্ত্রিসভা গঠন করে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বার্তা দিলেন? শাজাহান খান : আমি ঠিক এখনও সেভাবে বিশ্লেষণ করিনি। তবে মনে করি, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এখন গরিব দেশে নেই। মধ্য আয়ের দেশে বাংলাদেশ। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর প্রধানমন্ত্রী যদি বিশেষ কোনো বার্তা দিয়ে থাকেন, সেটা হচ্ছে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের অসমাপ্ত কাজগুলো নতুন মন্ত্রীরা সমাপ্ত করবেন জনগণের আস্থা তৈরির মধ্য দিয়েই।

জাগো নিউজ : আপনার নিজের অসমাপ্ত কাজ...

শাজাহান খান : নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আমাকে বলেছেন, আপনি যে কাজগুলো রেখে গেছেন, তা সমাপ্ত করাই হচ্ছে আমার সফলতা। তার মানে, যে প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে, তা শেষ করতেই আরও পাঁচ বছর সময় লাগবে। পায়রা বন্দর নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। জাহাজ নির্মাণের বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো সুদূরপ্রসারী কাজ এবং এজন্য সময় লাগবে।

আমি মনে করি, নতুন যিনি এসেছেন, তিনি আমার চাইতে অনেক ভালো করবেন। আমরা পুরনো দিনের মানুষ। বলা হয়, আমরা এনালগ। কিন্তু এখন যারা আসছেন, তারা মূলত ডিজিটাল যুগের মানুষ। তারা আরও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

জাগো নিউজ : মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কোনো দুঃখ বা ক্ষোভ...

শাজাহান খান : আমি হাসতে ভালোবাসি। যেদিন মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নিলাম সেদিনও হেসে চলে এসেছি। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কোনো দুঃখ-ব্যথা নেই।

আমি সফলভাবে আমার মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছি এবং বিদায় বলেই এটি ছিল আমার বড় পাওয়া। এই সফলতাই আমার কৃতিত্ব ও গর্ব। এই গর্ব নিয়েই আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে কোনো দায়িত্ব দেন তাহলে আরও সফলতার সঙ্গে তা পালন করতে পারব। জাগো নিউজ : আপনার করা মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ জমেছিল। ওই ঘটনায় এখন কোনো দুঃখবোধ কাজ করে কিনা? শাজাহান খান : আমি মনে করি, সাংবাদিকরা ওইদিনের ঘটনা একটু অতিরিক্ত করে সাজিয়েছিল। প্রকৃত ঘটনা পাশ কাটিয়ে সাংবাদিকরা আমার হাসি নিয়ে বিদ্রূপ করেছিল। যেন আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। ডিজিটাল যুগ। অনেক কিছুই করা সম্ভব। জাস্ট আমাকে বিব্রত করা হলো। আমার শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নানা সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আগে গার্মেন্টস ভাঙচুর আর আগুন লাগিয়ে দেয়া হতো। এখন কিন্তু এমন মারাত্মক ঘটনা ঘটছে না। ২০১৩ সালে তো আমিই শ্রমিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করলাম। সুতরাং যারা আমার সমালোচনা করছেন, তারা যদি দয়া করে আমার সফলতা নিয়ে একটু মূল্যায়ন করতেন, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি