দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে এখনই খরা, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে কী হবে?

কুড়িগ্রামে এবার শুষ্ক মৌসুমে বড় ধরনের খরার কবলে পড়তে পারেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে আগাম খরার কবলে পড়তে হয়েছে চরাঞ্চলের কৃষকদের। তুলনামূলক কম বন্যা আর বৃষ্টিপাতকে এর জন্য দায়ী করছেন কৃষক। আর জলবায়ুর এ প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে পড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

দেশের সর্ববৃহৎ নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রাম। দেশের বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রসহ, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী রয়েছে এ জেলায়। আর এসব নদ-নদীর ৩১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় চর-দ্বীপ জেগে উঠেছে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় ৪/৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। মূলত কৃষির উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয় এই জনপদের মানুষদের।

কিন্তু গত বছর উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষককে পড়তে হয়েছে আগাম খরার মুখে। মাটির রস শুকিয়ে যাওয়ায় আবাদকৃত ফসলের ফলন নিয়ে শঙ্কিত চরের কৃষকরা। বন্যা মানেই অভিশাপ হলেও এ জেলার জন্য বন্যা আশির্বাদস্বরূপ বলেই এখন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

জেলার মোট আবাদি জমি ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৩ হেক্টরের মধ্যে চরাঞ্চল জমি রয়েছে ৫৫ হাজার ৪০৮ হেক্টর। আর আবাদ হয় ৩৪ হাজার ৯০১ হেক্টর জমিতে। চরাঞ্চলের কৃষকরা ধান, বাদাম, কাউন, সরিষা, তিল, তিশি, মাসকালাই, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া, আলু ও বাঙ্গিসহ হরেক রকম ফসল উৎপাদন করেন এসব চরাঞ্চলের জমিতে।

সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের কৃষক আব্দুল লতিফ (৬০) চরের তিন বিঘা জমিতে ধান, বাদাম, মাসকালাই আবাদ করেছেন। চলতি শুষ্ক মৌসুমে মাটি শুকনা থাকায় খরচ বেশি পড়েছে। ফলনও তেমন একটা হয়নি।

একই এলাকার বক্কর (৬৫) ও সোবহান আলী (৫৫) জানান, এবার যে তাপমাত্রা তাতে চরাঞ্চলে আবাদ করা নিয়েই সংশয়ে আছি। মাঘ মাসেই নদ-নদীর পানি কমে গেছে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে যে কী অবস্থা হবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

Advertisement

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়াম্যান আব্দুর রহিম রিপন জানান, এ বছর নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাটিতে রস নেই। ফলে সেচ দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে কৃষককে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় চরের ফলনও কমে এসেছে। ফলে ধার দেনা করে আবাদ করলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা।

জেলা আবহাওয়া অফিসের আবহওয়া পরিদর্শক এএইচএম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুম জুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাপমাত্রা এবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ারও পূর্বাভাস দেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কুড়িগ্রামের আবাদি জমিতে পানি ধরে রাখার ধারণক্ষমতা কম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নদ-নদীসহ জীববৈচিত্র্যে এর প্রভাব পড়ছে। জেলাকে বড় ধরনের খরার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার ইতোমধ্যে নদ-নদী খনন কাজের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে পানির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন খরার কথা স্বীকার করে জানান, জেলার নদ-নদীতে পানি না থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকসহ অনেক কৃষকই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনাসহ চরাঞ্চলের কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

নাজমুল হোসেন/এফএ/এমকেএইচ/এসজি