বিশেষ প্রতিবেদন

ভুয়া পুলিশ : ছোট কর্মকর্তা ধরেন বড় কর্মকর্তা ছাড়েন!

ট্রাফিক পুলিশের হাতে আটক এক ভুয়া পুলিশকে মুক্ত করে দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত একজন উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বিরুদ্ধে। ঢাকা মেট্রোপলিটন সদর দফতরের পাশের সিগন্যালে ওই ভুয়া পুলিশকে আটক করলে ওই ডিআইজি টেলিফোন করে তাকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।শুধু তাই নয় মামলা দিতে চাইলে ট্রাফিকের (সার্জেন্ট) আনিছুর রহমানকে চাকরি খেয়ে নেয়া ও সিকিউরিটি সেলে নিয়ে সবাইকে অপদস্ত করারও হুমকি দেন ওই ভুয়া পুলিশ সদস্য।সোমবার সকাল ১০টা ৫৫মিনিটের দিকে পুলিশ অফিসার্স ক্লাব মোড়ে ওই ভুয়া পুলিশ সদস্যকে আটক করে ট্রাফিক দক্ষিণের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। পরে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে ওই ভুয়া পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কর্তব্যরত সহকারী কমিশনার (এসি) আলাউদ্দিন তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এ নিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।ট্রাফিক সার্জেন্ট আনিছুর রহমান বলেন, সোমবার সকাল থেকে ডিএমপির পুলিশ অফিসার্স ক্লাব মোড়ে ডিউটি চলছিল। ১০টা ৫৫মিনিটের দিকে মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো এলএ-১৩-৫০৩৩) হাকিয়ে উল্টো দিক থেকে এক ব্যক্তি আসেন। কাছে আসার পর দেখা যায়, তার ওই মোটরসাইকেলের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো।কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের এএসআই অপূর্ব তাকে দাঁড় করান। জানতে চান কোন এলাকার পুলিশ সদস্য, কেন তিনি উল্টো দিক থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে আসলেন। জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি উল্টো দিক থেকে আসলে আপনার কি সমস্যা, আমি একজন সম্মানিত পারসন, আমাকে আটকে রেখে আপনি আমার টাইম কিল (সময় নষ্ট) করতে পারেন না।এ সময় তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ও পুলিশের পরিচয় দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।ট্রাফিক সার্জেন্ট আনিছুর রহমান আরো বলেন, উল্টো দিক থেকে এসে আইন লঙ্ঘন করায় মামলা হবে বলে জানালে তিনি রেগে যান। হুমকি-ধামকি দিয়ে বলেন, আপনি আমার বিরুদ্ধে মামলা দিলে ২ ঘণ্টার মধ্যে আপনাদের সবাইকে পুলিশের সিকিউরিটি সেলে ঢুকাবো। আপনারা জানেন, আমি কে? আমার ৫ ভাই ডিএমপিতে চাকরি করেন। আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেন না।সার্জেন্ট আনিছুর রহমান বলেন, হুমকি ধামকির বিষয়টি ডিএমপি`র ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ডিসি খান মোহাম্মদ রেদওয়ানকে জানানো হয়। তিনি ওই ব্যক্তিকে আটক করে রমনা থানায় সোপর্দ করতে বলেন।ডিসির নির্দেশে রমনার টহল পুলিশ টিমকে ডাকা হয়। তারা আসার পর ট্রাফিকের এসি আলাউদ্দিন আসেন। তিনি পুলিশ সদর দফতরের কোনো এক ডিআইজির নির্দেশে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেন।এ ব্যাপারে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমিও চেয়েছিলাম ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় দিবো। কিন্তু তিনি পুলিশ সদর দফতরের এক ডিআইজির সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। ওই ডিআইজি আমার খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে আমি বাধ্য হয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।ওই ডিআইজি’র নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের নাম পরিচয় জানতে চাওয়া বেয়াদবি হয়ে যায়। তাই জিজ্ঞেস করিনি। আটক ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় না জেনেই ছেড়ে দেন তিনি।ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আলাউদ্দিন বলেন, আমি নির্দেশ দেয়ার পর কি হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি।জেইউ/এসআইএস/একে

Advertisement