ঝাং পেংফেই। ৪০ বছর বয়সী চীনের প্রাইমারি স্কুলের এই অধ্যক্ষ ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রেটি বনে গেছেন। আর এর কারণ বাচ্চা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার অদ্ভূত আচরণ। সাধারণত দেখা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা একটু রাগি টাইপের হন। তাকে দেখে শিক্ষার্থীরা ভয়ে জড়োসরো হয়ে থাকে।
Advertisement
তবে এই শিক্ষক একদমই ভিন্ন। তাকে দেখলে বাচ্চা শিশুরা মজা পায়। স্কুলের পিটিতে গতানুগতিক শরীরচর্চার পরিবর্তন এনেছেন তিনি। এতে যোগ করেছেন নাচ। সামনে থেকে তিনি নাচেন, পেছনে নাচে তার শিক্ষার্থীরা। এতে কাজও হয়েছে। পিটিতে আনন্দ পেতে নিয়মিত স্কুলে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৯৫১ সাল থেকেই চীনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা (পিটি) বাধ্যতামূলক। আগে দেশটির সরকারি কারখানা ও অফিসেও দিনের শুরুতেও সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। প্রতিদিন সকালে ডান-বাম, বাম-ডান মার্কা পিটি প্যারেডটা একঘেঁয়েমি লাগছিল শিক্ষার্থীদেরতো বটেই, এমনকি প্রধান শিক্ষকেরও।
শিক্ষার্থীদের মাঝে একঘেঁয়েমিতা দূর করতে চীনের শানঝি প্রদেশের জি গুয়ান প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্যাং পেংফেই তাই দিলেন সব উল্টাপাল্টা করে। পিটির সময় গানের তালে তালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচ শুরু করলেন তিনি।
Advertisement
গণমাধ্যমের প্রকাশিত ভিডিও দেখা যায়, কালো স্যুট-টাই পরে মাইক্রোফোন হাতে গানের তালে তালে মজার ভঙ্গিতে নেচে চলেছেন প্রধান শিক্ষক ঝাং পেংফাই। পাশে রয়েছেন একজন নারী সহকর্মী। নাচে তাদেরকে অনুসরণ করছে বাচ্চা শিশুরা। নাচের সময় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে।
রুটিনের অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকালে অদ্ভূত এই পিটিতে ৭০০ শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেন শিক্ষক ঝাং। নাচটি দেখতে মজার ও অদ্ভূত মনে হলেও এতে পায়ের গোড়ালি, হাঁটু ও হাতের নড়াচড়া হয়ে যায়। ফলে নাচের তালেই হয়ে যায় শরীরচর্চার কাজটি।
আধাঘণ্টা ধরে চলে নাচের তালে এই শরীরচর্চা। শরীরচর্চায় নাচের সংযোজন প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ঝাং মনে করেন, শরীরচর্চার এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত মোবাইল ফোনে আঠার মতো লেগে থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। শিশুরা আগ্রহ সহকারে শরীরচর্চায় অংশ নিচ্ছে।
‘আমি আসলে একটা পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম, কারণ শিক্ষার্থীরা গতানুগতিক রুটিনমাফিক শরীরচর্চায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। আমি মনে করে, নাচ শিক্ষার্থীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ নাচের সময় যে গান বাজানো হয় তা উদ্দীপনামূলক। এটা শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেয়। তারা শুধু এখন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে না’-স্থানীয় গণমাধ্যমকে কথাগুলো বলছিলেন সৃজনশীল এই শিক্ষক।
Advertisement
অক্টোবর থেকে এই পদ্ধতি চালু করেছেন চীনের এই শিক্ষক। দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোসহ বিভিন্ন মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। উইবোতে শেয়ার হওয়া ভিডিওর নাম দেখা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের অদ্ভূত নাচের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল।’ ভিডিওটি এখনো পর্যন্ত দেখা হয়েছে ২৫ কোটি বার।
একজন কমেন্টসে লিখেছেন, ‘এটা সম্ভবত বাচ্চাদের ক্রীড়া ও বিনোদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী সংযোজন।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি এর আগে যতজন শিক্ষককে দেখেছি, তাদের মধ্যে উনাকে সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার শিক্ষক বলে মনে হয়েছে। আমি যদি শিক্ষক হিসেবে তাকে পেতাম!’
এসআর/পিআর