পর পর চার কন্যাসন্তান। তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে জন্মের কয়েকদিন পরে। সর্বশেষ জন্ম নেয়া আরও এক কন্যা শিশুর মৃত্যুর পর প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। পর পর মেয়ে জন্মানোয় মা-বাবাই কি সন্তানদের খুন করছেন কিনা সেটাই ভাবছিলেন সবাই।
Advertisement
এ বিষয়ে ওই শিশুদের বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে কারা সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারেননি। এতে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। পরে এক প্রতিবেশী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওই শিশুদের বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে। বারো দিনের শিশুটির মরদেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বঁচাও, বেটি পড়াও’ বা রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের বার্তা যে সমাজের সর্বস্তরে এখনও পৌঁছায়নি, তারই প্রমাণ মিলল পশ্চিমবঙ্গের বাগদার সিন্দ্রাণীর বাবুপাড়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মণিকুমার বিশ্বাস ও রানি বিশ্বাসের প্রথম সন্তান জন্মায় পাঁচ বছর আগে। পেশায় কৃষিজীবী মণির এটা তৃতীয় বিয়ে। তার স্ত্রী বাংলাদেশি।
Advertisement
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতির প্রথম কন্যাসন্তান জন্মায় পাঁচ বছর আগে। কয়েক দিন বেঁচে ছিল সে। এরপরেই মারা যায়। চার বছর আগে দ্বিতীয় মেয়ের জন্ম হয়। জন্মেন পর দেড়মাস পর্যন্ত সে ছিল প্রতিবেশী গীতা মণ্ডলের হেফাজতে। ওই নারী বলেন, মেয়ে জন্মানোয় মণি খুব অসন্তুষ্ট ছিল। চিৎকার চেঁচামেচি করত। বাচ্চাটাকে অযত্নে রাখত। এই মেয়েটিই এখনও বেঁচে আছে। গীতার দাবি, ‘আমি চোখে চোখে না রাখলে হয় তো একেও মেরে ফেলত।’
বছরখানেক আগে বিশ্বাস দম্পতির তৃতীয় কন্যাসন্তান হয়। মাত্র তেইশ দিনের মাথায় সেও হঠাৎ মারা যায়। জন্মের বারো দিনের মাথায় চতুর্থ মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই হইচই শুরু হয় এলাকায়। রানি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে পঞ্চায়েতের আশাকর্মীরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছিলেন। তাদেরই একজন সাগরিকা অধিকারী বলেন, ওরা মেয়ে সন্তান চাইত না। মেয়ে হওয়ার আশঙ্কায় গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল। আমরা নিষেধ করেছি। অনেক বুঝিয়েছি। সন্দেহ হওয়ায় নিয়মিত খোঁজ খবরও রাখছিলাম। কিন্তু যা সন্দেহ ছিল, এখন দেখছি সেটাই সত্যি হল!
সোমবার সকালে কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা মণির বাড়িতে আসেন। দেখেন, সদ্যোজাত সন্তানটি মারা গেছে। কীভাবে মেয়ে মারা গেল, জানতে চাইলে মণি বা রানি এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। সুস্থ সন্তানই জন্ম দিয়েছিলেন রানি। রোববারও তাকে সিন্দ্রাণী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
পুলিশ এসে মরদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই দম্পতিকে। পুলিশ জানিয়েছে, আগের শিশুগুলো কিভাবে মারা গেল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Advertisement
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেয়ে হয়েছে বলে ওরা বাচ্চাকে অযত্নে ঠান্ডা মেঝেতে শুইয়ে রাখত। ঠিক মতো খেতেও দিত না। ওদের বাচ্চাকে প্রতিবেশীরাই দুধ কিনে খাইয়েছে। মণির দ্বিতীয় মেয়েটিকে নিজেদের কাছেই রেখেছেন পড়শিরা।
টিটিএন/এমকেএইচ