কোন ধরনের শোধন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে রাজশাহী ওয়াসা। এই পানির ৯৬ শতাংশ জোগান আসছে ভূগর্ভ থেকে। এতেই সন্তুষ্টি সংশ্লিষ্টদের। তবে অচিরেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীতে ৫টি পানি শোধনাগার রয়েছে তাদের। পদ্মার পানিনির্ভর শ্যামপুরে একমাত্র ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারটি সচল থাকে বছরে মাত্র ৪ মাস। বাকি চারটি ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার পরীক্ষামূলক চালুর পর থেকে বিকল। এই অবস্থায় ৯৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৩০ জন অধিবাসীর এই শহরে ওয়াসার গ্রাহক পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে ৪ লাখ ৪ হাজার ২১০ জন। শতকরা হিসাবে পানির কাভারেজ ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। আওতা শতভাগে উন্নীত করতে কাজ করছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, এখানে ওয়াসার গ্রাহক ৪২ হাজার ৬৮০। সবমিলে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ দশমিক ৩৩ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে ৭ দশমিক ৭৮ কোটি লিটার। এর ৯৬ শতাংশই আসছে ভূগর্ভ থেকে। জনপ্রতি দৈনিক ১৯০ দশমিক ৭৪ লিটার পানি উৎপাদন হলেও ব্যবহার হচ্ছে ১২৬ দশমিক ৩০ লিটার।
Advertisement
নগরজুড়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন রয়েছে ৭১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। দৈনিক ৫ দশমিক ১০ কোটি লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। সংস্থাটি দিনে ১২ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও উন্নত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১১ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ ভেঙে আলাদা ওয়াসার যাত্রা। গত আট বছরে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ সংস্থাটি।
নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন কর্মকার বলেন, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পানযোগ্য নয়। ময়লা ছাড়াও পানিতে প্রচুর আয়রন। পাত্রে সংরক্ষণ করলে লাল স্তর পড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করতে গিয়ে দেখা যায় নিচে সাদা স্তর।
নগরীর রাণীনগর এলাকার গৃহবধূ সাঈদা রায়হানা বলেন, এই পানি কেবল রান্নাবান্না ও ধোয়া-মোছার কাজে লাগে। ওয়াসার পানিতে গোসল করাও যায় না। এক টানা ১০ দিন গোসল করলে চুল নষ্ট হয়ে যায়।
Advertisement
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আব্দুল হামিদ।
তবে না প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনায় রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ। অনেকেই না ফুটিয়েই এই পানি পান করেন। অনেকেই উৎপাদক গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে গিয়ে পান করেন। নিজস্ব পরীক্ষায় ওয়াসার পানিতে পানিবাহিত রোগবালাইয়ের জীবাণু মেলেনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আঞ্চলিক গবেষণাগারের সিনিয়র কেমিস্ট শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে তারা যে পরীক্ষা চালিয়েছেন তাতে পানিতে তেমন রোগবালাইয়ের জীবাণু মেলেনি। পানির গুণগত মানেরও তেমন পরিবর্তন হয়নি।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মূলত ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহ, শোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে ওয়াসার পানি সুপেয় হচ্ছে না। এটি সাধারণ বিষয়। তবে সরবরাহ লাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা গেলে এবং রাসায়নিকভাবে শোধন না করলে বিপদ দ্বিগুণ হবে।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ অক্টোবর ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মার পানি শোধন করে রাজশাহী নগরী ও এর আশেপাশের পৌর এলাকায় সরবরাহ হবে।
এই শোধনাগারে প্রতিদিন ২০ কোটি লিটার পানি শোধন হবে। পরিশোধিত পানি সরবরাহে গড়ে তোলা হবে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে প্রধান সরবরাহ লাইন থাকবে ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এছাড়া ৪৮ কিলোমিটার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সরবরাহ লাইনও থাকবে।
ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ হবে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। এরই মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
এএম/এমএস