গণমাধ্যম

নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট জারিতে দেরির ইঙ্গিত

২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ গেজেট আকারে জারি করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে এটি গেজেট আকারে জারি করা সম্ভব হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

Advertisement

সোমবার সচিবালয়ে তার নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ ইঙ্গিত দেন।

নবম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একই থাকলেও সরকার নতুন হওয়ায় কমিটিগুলো নতুন করে গঠন করতে হয়। তাই নবম ওয়েজ বোর্ডের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। এতে ৫ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছে। তাই ২৮ জানুয়ারির মধ্যে গেজেট দেয়া কী সম্ভব? এর জন্য মন্ত্রণালয়সহ সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এছাড়া অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

তিনি বলেন, ওয়েজ বোর্ড দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা কমিটি পুনর্গঠন করেছি এবং তা প্রথম বৈঠকেই করেছি। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে এটি বাস্তবায়নে কী কী করা যায়। আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। আজকে সবেমাত্র কমিটি হলো। আইনগত বিধিবিধান মেনে ২৮ তারিখের মধ্যে কী প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব? সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।

Advertisement

এদিকে নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশের খসড়া পরীক্ষা করে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ দিতে ইতিপূর্বে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটিতে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে প্রধান করা হলেও পুনর্গঠিত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ-২০১৮ পরীক্ষার জন্য ইতিপূর্বে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত সরকারের শেষ সময়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী। এখন যেহেতু মন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে কাজেই কমিটি পুনর্গঠন করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে আহ্বায়ক করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। আগের কমিটি ছিল ৫ জনের নতুন কমিটি সাত জনের।

Advertisement

২৮ জানুয়ারির মধ্যে নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ গেজেট আকারে জারি করার কথা। সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে নবম ওয়েজ বোর্ড। গত ৩ ডিসেম্বর নতুন এই বেতন কাঠামো পরীক্ষা করে বাস্তবায়নের সুপারিশ দিতে সংস্কৃতিমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়।

ওই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, ওয়েজ বোর্ডে প্রথম তিনটি গ্রেডে ৮০ শতাংশ ও শেষের দিকে তিনটি গ্রেডে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। যে সুপারিশ আসছে তারা (কমিটি) সেটা পর্যালোচনা করে হয়তো একটা নির্ধারণ করবেন।

নতুন ওয়েজ বোর্ডে সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া পাবেন। সেই সঙ্গে ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতাও পাবেন বলে জানিয়েছিলেন শফিউল আলম।

গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ-২০১৮’ এর সুপারিশমালা জমা দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক।

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য গত বছরের ২৯ জানুয়ারি নবম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। ১৩ সদস্যের এই বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক। এছাড়া সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ এবং সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কর্মচারী বা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সমসংখ্যক প্রতিনিধিও রয়েছেন ওয়েজ বোর্ডে।

সরকারের কাছে সুপারিশ দিতে বোর্ডকে ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল। গত ২৮ জুলাই সেই সময় শেষ হয়। পরে নবম মজুরি বোর্ডের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়।

গত ১১ সেপ্টেম্বর নবম বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার আগে প্রতি মাসের মূল বেতনের উপর ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার। যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়। এ মহার্ঘ ভাতা বোর্ডের নির্ধারিত সামগ্রিক বেতন কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

এমইউএইচ/এসএইচএস/আরআইপি/এসজি