বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ১৮ বছর কেটে গেছে। আদালতে সাক্ষী না আসায় এখনও শেষ হয়নি ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার। নির্ধারিত ঠিকানায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে সমন জারি হলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বারবার সাক্ষীদের সমন ফেরত আসছে আদালতে।
Advertisement
হামলার ১৮ বছরেও বিচার শেষ না হওয়ায় যেমন অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছেন না, তেমনি দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে অপরাধের মাত্রা। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৮ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হওয়ায় সরকারকেই দায়ী করছেন দলটির প্রধান।
২০০১ সালের এই দিনে (২০ জানুয়ারি) পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশ চলাকালে ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হন দলটির পাঁচ সদস্য। আহত হন অনেকে। সাড়ে চার বছর আগে ওই মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ১০৭ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত হত্যা মামলায় ২৮ জন আর বিস্ফোরণ মামলায় ৩০ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।
মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলছে ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
Advertisement
এ বিষয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, শুরু থেকে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলাটির বিচার অবহেলার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। আমরা শুরু থেকে সরকারকে বলেছি, ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে, সেটাই ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা ১৮ বছরেও ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। সরকার ইচ্ছা করলে মামলাটির বিচার খুব দ্রুত শেষ করতে পারত।’
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মামলাটি চলায় সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাক্ষীদের ঠিকানায় সমন পাঠানোর পরও তাদের খুঁজে না পাওয়ায় সমন ফেরত আসছে।’
‘আমরা চাই আলোচিত মামলাটি দ্রুত শেষ হোক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাক্ষী ক্লোজ করে মামলাটি শেষ করব।’
Advertisement
বাদীপক্ষের আইনজীবী সোহেল আহম্মেদ বলেন, ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান। ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট তার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর মৃত্যুর প্রতিবেদন না আসায় এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষ্য হয়নি। সাক্ষী না আসায় শেষ হচ্ছে না মামলাটির বিচার।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে (২০১৮ সাল) কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। সাক্ষী না আসায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। ন্যায়-অন্যায় রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশ চলাকালে বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত হন, আহত হন অনেকে। নিহতরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটার হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
ঘটনার দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ‘আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন।
এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে ২০০৫ সালে আবারও মামলার তদন্ত শুরু হয়। ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ ইমরায়ুল কায়েস।
আসামিরা হলেন- মুফতি হান্নান, মাইনুদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ও মশিউর রহমান। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন আব্দুল হাই, শফিকুর রহমান, নুর ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মুহিবুল্লাহ মুত্তাকীন, আনিসুল ইসলাম মোরসালীন ও রফিকুল ইসলাম মিরাজ।
২০১৭ সালের ১২ আগস্ট মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় আসামিদের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
জেএ/এমএআর/আরআইপি