মিথ্যা হলফনামা দেয়ার অভিযোগে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং মুন্সীগঞ্জ -৪ এর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলা বাতিলের রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
একইসঙ্গে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে থাকা দুদকের এ মামলাটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন আদালত। এর ফলে তার বিরুদ্ধে মামলাটি চলতে আর কোনও বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল খারিজ করে এ রায় দেন।
আদালতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মো. খুরশিদ আলম।
Advertisement
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ‘সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল হাই ২০০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান বরাবরে গুলশান ও বনানী আবাসিক এলাকায় তার নামে একটি প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের সঙ্গে রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী একটি হলফনামা দাখিল করেন। হলফনামায় অঙ্গীকার করেন যে, ‘বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোথাও তার নিজের নামে, স্ত্রী/নির্ভরশীল ছেলে-মেয়ে অথবা পোষ্যের নামে কোনও আবাসিক জমি বা বাড়ি/ ফ্ল্যাট ক্রয় কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে নেই। অথবা ডিআইটি বর্তমানে রাজউক অথবা কোনও সরকারি সংস্থা কর্তৃক কোনও আবাসিক জমি বা বাড়ি বরাদ্দ অথবা লিজ প্রদান করা হয় নাই এবং এ ঘোষণা সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল।’
এরপর ২০০৫ সালের ৭ জুন মো. আবদুল হাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তার নামে গুলশান ও বনানী আবাসিক এলাকায় সাময়িকভাবে বরাদ্দ প্লটের বরাদ্দপত্র জারির জন্য রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর আবদুল হাইয়ের নামে বনানী আবাসিক এলাকায় একটি প্লট শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় রাজউক।
২০০৫ সালের ২০ জুন বনানী আবাসিক এলাকার ৩ নং রাস্তায় ৫ কাঠা আয়তনবিশিষ্ট ৯ নং প্লটটি আবদুল হাইয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
পরে অনুসন্ধানে রাজউক থেকে ৯ জন প্লট গ্রহীতার বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তথ্য গ্রহণ করা হয়। এতে ওই ৯ জনের নাম আইডি নং ও প্লটের নাম এবং তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের নাম ও আইডি নং সংগৃহীত হয়। রাজউকের ওই তথ্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত ৯ জনের মধ্যে (১) জামিলা খাতুন, মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রীর বারিধারা (কে-১৩-৩৩) (২), জিয়াউল মুজিবের (সেলিমা রহমানের ছেলে) প্লট নং নিকুঞ্জ -১ (নিকি-১০৩-২) এই দুটি বরাদ্দের তথ্য আজ পর্যন্ত এন্ট্রি করা তথ্যের মধ্যে পাওয়া গেছে। বাকিদের নামে বরাদ্দের তথ্য পাওয়া যায়নি।
Advertisement
মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রী জামিলা খাতুন ১৯৮৭ সালের ১২ এপ্রিল তার নামে বরাদ্দ প্লটটি মনোয়ার হোসেনের কাছে বিক্রি করেন। ফলে আবদুল হাই তথ্য গোপন করে হলফনামা দিয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুদকের উপ- পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা করেন। একই উপ-পরিচালক তদন্ত করে ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলাটিতে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৮। পরে বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে ২০১৮ সালের ১০ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন এবং মামলাটির কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, আবদুল হাই ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম