রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক বিজয় উপলক্ষে এ সমাবেশ করছে দলটি। এ সমাবেশ ঘিরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়। তারপরও রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও পরিবহন সঙ্কটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সাধারণ যাত্রীদের।
Advertisement
শনিবার দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে সকাল থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে ট্রাক, বাস পিকআপ, ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে দলে দলে আসতে থাকে দলীয় নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে বিজয়ের গান ‘জিতবে এবার নৌকা’ গাইতে গাইতে আসতেও দেখা যায় রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার নেতাকর্মীদের। বেলা গড়াতেই রাজধানীতের অনেক স্থানে বদলে যায় স্বাভাবিক চিত্র। মিছিল, শোডাউন আর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্রোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
কোথাও কোথাও পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের সংযোগ সড়কগুলো ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। যে কারণে সড়কের স্থবিরতা গিয়ে ঠেকে অলিগলিতেও।
রাজধানীর রমনা, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মগবাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সামনে মিছিলের কারণে সড়কে আটকে থাকে যানবাহন। যে কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ফলে বিপাকে পড়ে বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ।
Advertisement
বিজয় উৎসবকে ঘিরে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ রেখেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচলও রয়েছে নিয়ন্ত্রিত।
প্রধানমন্ত্রীসহ ভিআইপিদের আগমন উপলক্ষে শনিবার ভোর থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহাবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার, চাঁনখারপুল, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টু রোডসহ কয়েকটি সড়ক ডাইভারশন করে দিয়েছে পুলিশ।
দুপুর পৌনে ১টায় নিউ মার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় দেখা যায়, সড়কে আওয়ামী ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড়। মিছিল নিয়ে দলে দলে আসতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। ফলে যানবাহনেও ছিল ধীর গতি। পলাশী মোড়ে এসে তা যানজটে রূপ নেয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলামোটর এলাকায় দেখা যায়, এক লেনের সড়ক বন্ধ রেখেছে পুলিশ। ফলে পাশের লেনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
Advertisement
বিকেল ৩টার দিকে রমনা এলাকায় দেখা যায়, যানজটে আটকে আছে গাড়ি। যানজট ছড়িয়ে পড়েছে হাতিরঝিল থেকে মগবাজার, কাকরাইল মোড় অবধি।
কারওয়ান বাজার, পান্থপথ সড়কে গণপরিবহন তুলনামূলক কম থাকলেও মিছিলের কারণে আটকে থাকতে দেখা যায় যানবাহন। কোথাও আবার ধীর গতি।
অন্যদিকে গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী ও কলেজগেট এলাকায় দেখা যায়, গণপরিবহন কম থাকায় অপেক্ষায় ছিল সাধারণ যাত্রীরা। অনেকে বাধ্য হয়ে সিএনজিচালিত অটোরকিশা, উবার কিংবা পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সহযোগিতায় গন্তব্যে যান। যাত্রীরা বলেন, পরিবহনের বাস ও চালকদের সমাবেশে নিয়ে যাওয়ায় সঙ্কট আরও বেড়েছে।
সবুজ নামে ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা নিউমার্কেট এলাকায় বাসে আটকে থাকার হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দেন।
তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে ভালোই আসলাম, তবে ঢাকায় ঢুকেই যানজট। গাড়ি যেন নড়ছেই না।
বাংলামোটরে ডাইভারশন দেখে বাস থেকে অনেকের মতো নেমে মগবাজার, মালিবাগ হয়ে মতিঝিল হয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে চলে যান আলতাফ হোসেন। যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘কারো উৎসব, কারো কষ্ট।’
ফার্মগেট, আসাদগেট, তেজগাঁও এলাকায় এক লেনে যানজট আরেক লেন ফাঁকা দেখা যায়।
ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের ডিসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগে কোনো সমস্যা নেই, যানজট কিংবা ধীর গতিও নেই।’
ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের ডিসি লিটন কুমার জানান, মাঝে কিছুক্ষণ যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল, এখন ডাইভারশন করায় যান চলাচলে গতি ফিরেছে। তবে ফিরতি পথে পর্যাপ্ত যানবাহন না পাওয়ায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো সমস্যা দেখছি না।
জেইউ/এআর/এনডিএস/এমকেএইচ/এসজি