২০১৪ সালের প্রথম দিনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং অলরাউন্ডার কোরি এন্ডারসন। ভেঙেছিলেন শহীদ আফ্রিদির করা ১৮ বছর পুরনো ৩৭ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
Advertisement
কিন্তু এন্ডারসনের এ রেকর্ড টিকেছিল মাত্র ১ বছর ১৮ দিন পর্যন্ত। কেননা পরের বছরই অর্থাৎ ২০১৫ সালের আজকের তারিখে ঠিক চার বছর আগের ১৮ জানুয়ারিতে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা '৩৬০ ডিগ্রি' খ্যাত ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স।
জোহানেসবার্গের দ্য ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে সেদিন সত্যিকারের ঝড় তুলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। তবে তিনি উইকেটে আসার আগেই উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে তৎকালীন সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন রিলে রুশো এবং হাশিম আমলা।
দুজন মিলে মাত্র ৩৮.৩ ওভারে করে ২৪৭ রান। ৩৯তম ওভারের তৃতীয় বলে জেরোমি টেলরের ডেলিভারিতে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রুশো। মাত্র ১১৫ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কার মারে খেলেন ১২৮ রানের ইনিংস।
Advertisement
রুশোর বিদায়ে যখন উইকেটে আসেন ডি ভিলিয়ার্স, তখন ইনিংসের বাকি মাত্র ৬৯ বল। আর ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে যখন সাজঘরে ফিরে যান তিনি, তখনো তাদের ইনিংসে বাকি ছিল ২টি বল। মাঝের ৬৭ বলের মধ্যে ৪৫টিই খেলেন ডি ভিলিয়ার্স এবং আক্ষরিক অর্থেই চোখের জল, নাকের জল এক করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের।
উইকেটে এসে চালচিত্র বুঝে নিতে এক বলও খরচ করেননি ডি ভিলিয়ার্স। মুখোমুখি প্রথম বলেই মিড অন ফিল্ডারের পাশ দিয়ে চার মেরে নিজের যাত্রা শুরু করেন তিনি। পরের ওভারে বোলিংয়ে আসেন আন্দ্রে রাসেল। শেষের চার বলে ২টি করে চার-ছক্কার মারে ২০ রান নিয়েন নেন ডি ভিলিয়ার্স।
৪২তম ওভারে ডি ভিলিয়ার্সের ঝড় পুরোপুরি শুরুর আগেই থামানোর জন্য আক্রমণে আসেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। কিন্তু তিনিও শেষ চার বলে হজম করেন ৬, ৬, ৬ ও ৪। এ ওভারে দ্বিতীয় ছক্কার মারার সময় মাত্র ১৬ বলে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। যা করতে তার সময় লাগে মাত্র ১৯ মিনিট।
দ্রুততম ফিফটি করেই দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না ডি ভিলিয়ার্স। একের পর এক ছক্কা মারতে থাকেন টেলর, রাসেল, হোল্ডারদের। তার এই ব্যাটিং তাণ্ডবের মাঝে তুরুপের তাস হিসেবে মিডিয়াম পেসার ডুয়াইন স্মিথকে বোলিং দেন হোল্ডার। আর এই সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগান ডি ভিলিয়ার্স।
Advertisement
তবে এর আগেই হোল্ডারের করা ৪৬তম ওভারের শেষ চার বলে যথাক্রমে ৪, ৬, ৬, ও ৬ মেরে ২২ রান নেন তিনি। এর মাধ্যমে পূরণ করে ফেলেন মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরি, ভেঙে দেন ১ বছর ১৮ দিন আগে করা এন্ডারসনের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। আর মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরি করার সময় উইকেটে ডি ভিলিয়ার্সের অতিবাহিত সময় মাত্র ৪০ মিনিট।
৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন স্মিথ। তিনি যেন ভিলিয়ার্সের সামনে দিয়ে যান দ্রুততম দেড়শ রান করার সুযোগটাও। সে ওভার থেকে প্রথম ৫ বলেই ৬, ৬, ৪, ৬ এবং ৬ মেরে ২৮ রান নিয়ে নেন ডি ভিলিয়ার্স। শেষ বলে ২ রান নিয়ে ওভার থেকে মোট ৩০ রান যোগ করেন তিনি।
তখন ডি ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ ৪১ বলে ১৬ চার ও ৯ ছক্কার মারে ১৪৭ রান। শেষ ওভার থেকে আর মাত্র ৩ রান করতে পারলেই বনে যাবেন দ্রুততম দেড়শ করা ব্যাটসম্যানও। তাকে এ সুযোগ দিতেই প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন হাশিম আমলা।
ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রান নিয়ে ঠিক পথেই আগান ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু পরের বল ডট করে বসেন আন্দ্রে রাসেল। আর চতুর্থ বলেই ঘটে ডি ভিলিয়ার্স নামক হ্যারিকেনের সমাপ্তি। ডিপ কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে কার্টারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। থেমে যায় ৪৪ বলে ১৪৯ রানের টর্ণেডো ইনিংসটি।
৩৮.৩ ওভারে ডি ভিলিয়ার্স উইকেটে আসার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ যেখানে ২৪৭, সেখানে ৪৯.৪ ওভারে তিনি ফেরার সময় দলের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৩৯ রানে। অর্থাৎ মাত্র ৬৭ বলে ১৯২ রান পায় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
সে ইনিংসে দ্রুততম ফিফটি এবং সেঞ্চুরির পাশাপাশি এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৬টি ছক্কার রেকর্ডও গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। এছাড়া তার পাশাপাশি রুশো এবং আমলাও সেঞ্চুরি করলে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করার বিশ্বরেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচে হাশিম আমলা ১৪২ বলে ১৪ চারের মারে ১৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৩৯ রান। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান করতে সক্ষম হলে ১৪৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এসএএস/এমএস