নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেন।
Advertisement
তবে ১৭ দিন হাসপাতালের বেডে লড়াই শেষে বাড়ি গেলেও নিজ এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার ভীতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের।
নোয়াখালী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী দুই সপ্তাহের অধিক সময় রোগীকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা শেষে ছুটি দেয়া হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তাকে হাঁড়ের চিকিৎসকের কাছে আসতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ রয়েছেন গৃহবধূ। স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া ও নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারছেন তিনি। সর্বশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অর্থোপেডিক বিভাগে আবারও তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরবর্তীতে তার কোনো সমস্যা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।
Advertisement
হাসাপাতাল ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার সময় নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, আগের চেয়ে একটু ভালো আছি। একটু হাঁটতেও পারছি। তবে এলাকা থেকে নানা ধরনের হুমকি আসাতে ভয়ে আছি। সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তা চাই।
গৃহবধূর স্বামী বলেন, এখন যেহেতু আগের চেয়ে তার অবস্থা ভালো তাই ডাক্তাররা তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই তাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তবে এলাকা থেকে নানা ধরনের হুমকি আসছে। তারা বলছে, সরকার কতক্ষণ তোমাদের পাহারা দেবে। এরপর কী হবে। এসব হুমকি দেয়া হচ্ছে আমাদের।
এদিকে, হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সঙ্গে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই জাকির হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর সকালে নির্যাতিত গৃহবধূ ভোট দিতে গেলে নৌকার কয়েকজন সমর্থক তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলে। তিনি তখন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় গৃহবধূকে ‘তোর কপালে শনি আছে’ বলে হুমকি দেয় তারা। পরে কেন্দ্র থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান গৃহবধূ।
Advertisement
এরপর রোববার রাত ১২টার দিকে একই এলাকার ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে এসে প্রথমে বসতঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে (১২) বেঁধে রেখে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়।
একপর্যায়ে ধর্ষকরা তাকে গলা কেটে হত্যা করতে উদ্যত হয়। এ সময় প্রাণ ভিক্ষা চাইলে গৃহবধূকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির উঠান সংলগ্ন পুকুর ঘাটে ফেলে চলে যায় তারা।
পরের দিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর রাতে ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন ওই নারীর স্বামী।
ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যা। এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এ ঘটনায় জড়িত আটজন।
মিজানুর রহমান/এএম/জেআইএম