দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আটলান্টিক মহাসাগরের দীর্ঘ উপকূল জুড়ে পর্তুগালের অবস্থান। ইউরোপে চমৎকার দীর্ঘ বিচের জন্য বিখ্যাত দেশটি। তাই দেশটিকে ‘সাগর কন্যার দেশও’ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্তুগালে দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগমন ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরূপে যেমন সাবলীল পর্তুগাল তেমনি পর্তুগালকে ইউরোপে অভিবাসীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
Advertisement
ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেখানে অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করে, সেখানে পর্তুগাল বৈধ পন্থায় প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য সহজ শর্তে রেসিডেন্স (থাকার অনুমতি) প্রদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। এবার ভিসাবিহীন অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্যও নতুন করে পর্তুগিজ সংসদে বিল পাস হয়েছে।
বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে যে সকল ভিসাবিহীন অনিয়মিত অভিবাসী পর্তুগালে স্থায়ীভাবে অবস্থানের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা নম্বরের মাধ্যমে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন তাদেরকে সহজতর এই প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেয়া হবে। ২০১৫ সালের ৩০ জুনের আইন ৬৩/২০১৫ এর আলোকে ১ জুলাই ২০১৫ থেকে যারা পর্তুগালে অবস্থান করছেন তারা উল্লেখিত বিলের আওতাধীন।
২০১৮ সালের গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে ১৮ জুলাই (বুধবার) ছিল পর্তুগিজ সংসদ অধিবেশনের শেষদিন। সেই দিনই সংসদ কার্যদিবসে পর্তুগালের ক্ষমতাসীন দল পর্তুগিজ সোশ্যালিস্ট পার্টি অনিয়মিত হয়ে পড়া অভিবাসীদের বৈধতা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করতে সংসদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। সেসময় বলা হয়, যে সকল অভিবাসী পর্তুগালে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাসহ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তাদের বৈধ করে স্বীকৃতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।
Advertisement
তারই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার পর্তুগিজ সংসদের সাধারণ অধিবেশনে এই বিলটি উত্থাপিত হয় এবং সংসদ সদস্যদের সম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। শুধুমাত্র পর্তুগালের রক্ষণশীল খ্রিষ্টানসমর্থিত রাজনৈতিক দল সিডিএস-পিপি এই বিলটির বিরোধিতা করে। এ ছাড়া সরকারি অ্যালায়েন্স, বিরোধী দল পিএসডি এবং পর্তুগিজ কমিউনিস্ট পার্টি বিলটিতে সমর্থন জানায়।
পর্তুগালের সরকারি দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারণীর অন্যতম সদস্য এবং পর্তুগিজ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো সংসদে এই প্রস্তাবটি উত্থাপনের বিষয়টি নিয়ে এর আগে ২০১৮ সনের সংসদের গ্রীষ্মকালীন অধিবেশন শেষে একান্ত আলাপকালে জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, আমরা অনিয়মিত হয়ে পড়া অভিবাসীদের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রক্রিয়া তৈরি করেছি। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যারা পর্তুগালে বসবাস করছেন এবং সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখছেন তাদের জন্য অভিবাসন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো সহজ করতে আমরা একমত। সম্ভবত মাসকয়েকের মধ্যে সংসদ থেকে বিস্তারিত আকারে এটি পাস হয়ে আসবে।
এ ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তাও অভিবাসন বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। সম্প্রতি এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগী হতে পর্তুগালের আরও অভিবাসী প্রয়োজন।’
ইউরোপের অন্যান্য দেশ অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করলেও সেখানে পর্তুগাল সেখানে অভিবাসীদের জন্য ‘স্বর্গরাজ্য’। বন্ধুসুলভ মানুষ, চমৎকার আবহাওয়া, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর বহুবিচিত্র সাংস্কৃতির এক অনন্য পাঠশালা পর্তুগাল।
Advertisement
এসআর/এমএস