মরণোত্তর একুশে পদক পাওয়া খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি)। হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পর ঘটনাটির পুনরায় তদন্ত ও নতুন করে বিচারের দাবি করেছেন তার সহকর্মী বন্ধু ও সাংবাদিকরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মানিক সাহার পর খুলনায় আরেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। তখন খুলনার সাংবাদিকরা রাজপথে বসে কলম ভেঙে বলেছিলেন, ‘বিচার পাই না তাই বিচার চাই না।’ কিন্তু আমরা বলবো, আমরা বিচার চাই। মানিক সাহার যে বিচার হয়েছিল তা তার পরিবার গ্রহণ করেনি, তার সহকর্মীরা গ্রহণ করেনি, আমরা সাংবাদিকরাও গ্রহণ করিনি। আমরা তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুনঃতদন্ত ও বিচার চাই।
তিনি বলেন, মানিক সাহা শুধু সাংবাদিক, বন্ধু কিংবা সহকর্মী ছিলেন না। তিনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক বিষয়ে আমাদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সুন্দরবন ও চিংড়ির ঘের নিয়ে রিপোর্টের মাধ্যমে সবাইকে এসব বিষয়ে শিখিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ফ্রিডম ফোরাম নামে একটি সংস্থা আছে। যেসব সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যুবরণ করলে তাদের নামের ফলক তৈরি করা হয়। সেই ফ্রিডম ফোরামে আমি মানিক সাহার নাম দেখেছি।
Advertisement
মনজুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, ওই নাম ফলকে তার নাম আমাকে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের শীর্ষমানের একটি অর্জনের বিষয়ে মনে করিয়ে দেয়, একইভাবে দুঃখ, লজ্জা এবং হতাশায় তালিকাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পেশাগত কাজে হত্যার শিকার হয়েও বাংলাদেশের সাংবাদিক হত্যার বিচার হলো না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে গণমাধ্যমবান্ধব অনেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিগুলো গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি সাংবাদিক হত্যার বিচার না হয়।
মানববন্ধনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানিক সাহাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বোমা মেরে তার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করলেও তার আদর্শ বিচ্ছিন্ন করা যায় না। বাংলাদেশের সমস্ত তরুণ ও সাংবাদিকদের কাছে আমার আহ্বান, আসুন আমরা মানিক সাহার মত একাগ্রতা দেখাই। আমি মানিক সাহা হত্যার বিচার দাবি করছি।
চ্যানেল২৪-এর হেড অব নিউজ রাহুল রাহা বলেন, মানিক সাহা বাংলাদেশে প্রথম জঙ্গিবাদ নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষকে বাংলা ভাই চিনিয়েছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, ভূমিহীন ও বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তার বিচারে জড়িতরা কেউ শাস্তি পায়নি, তাহলে কি ভূত এসে হত্যা করেছে? আমরা আবারও তার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার চাই।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল বলেন, মানিক সাহার অনেক লেখা আমরা পড়েছি। তার বিষয়ে পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা করতে এসেছি। আমি তার হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
Advertisement
বিএফইউজের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যার বিচার পাইনি, জানি না মানিক সাহা হত্যার বিচার পাব কি না। তবুও বিচারের আগ পর্যন্ত দাবি জানিয়েই যাব।
মানিক সাহা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অকুতোভয় সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী, সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বারবার কারা নির্যাতিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের কাছে ছোট মির্জাপুরের রাস্তায় বোমা হামলায় নিহত হন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর খুলনা সদর থানার এসআই রণজিৎ কুমার দাস হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিবিসি বাংলার খণ্ডকালীন সংবাদদাতা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, খুলনা চ্যাপ্টারের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন মানিক সাহা।
মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় ২০০৪ সালের ১০ জুন ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে। ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় আরও একজনের নাম যোগ করা হয়।
ওই ঘটনার এক যুগ পর ২০১৬ সালে ৯ আসামির যাবজ্জীবন সাজা ও দুইজনকে খালাস দেন আদালত। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এই রায় প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এআর/আরএস/জেআইএম