জঙ্গি দমনে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। দেশে-বিদেশে সরকারের এই ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বা কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার সাফল্য দেখালেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। বরং সরকার যতই কঠোর অবস্থান নেয় জঙ্গিরা ততই নতুন নতুন ফাঁকফোকর আবিষ্কার করে। গ্রহণ করে নতুন নতুন কৌশলও।জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে জঙ্গি অর্থায়ন। এই অর্থের উৎস বন্ধ করতে না পারলে যে জঙ্গি দমনের বিষয়টি সোনার হরিণ হয়েই থাকবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের তিনজন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি। বিশেষ করে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধেও যখন জঙ্গি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে সেটি অত্যন্ত উদ্বেগের জন্ম দেয়।জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদ থেকে জানা যায়, জঙ্গি সংগঠনের অর্থ লেনদেনে ফেঁসে যাচ্ছে রাষ্টায়ত্ত সোনালী, বেসরকারি খাতের ডাচ বাংলা ও এক্সিম ব্যাংক লিমিডেট। জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা প্রদানের অভিযোগে গ্রেফতার তিন আইনজীবী এসব ব্যাংকের স্থানীয় শাখার মাধ্যমে হিসাব ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে। ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ নামের চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠনের জন্য সংগৃহীত এক কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে গ্রেফতার হওয়া তিন আইনজীবী এক কোটি আট লাখ টাকার যোগান দিয়েছেন। এর মধ্যে শাকিলা দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ করে মোট ৫২ লাখ টাকা, মো. হাছানুজ্জামান ৩১ লাখ টাকা এবং মাহফুজ চৌধুরী ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।যখন কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন হয় ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া। কিন্তু সবক্ষেত্রে যে এটি করা হয় না তার প্রমাণ তিন আইনজীবীর অর্থ লেনদেনের বিষয়টি। যদি তারা গ্রেফতার না হতেন তাহলে হয়তো বিষয়টি অগোচরেই থেকে যেত। হয়তো অগোচরে থেকে যাচ্ছে অারো অনেক লেনদেনই। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিগত অনেক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংক থেকে। এ অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গি অর্থ লেনদেন ঠেকানো যাচ্ছে না এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জঙ্গি অর্থায়নের ব্যাপারে তারা কঠোর অবস্থানে। তাহলে ব্যাংকগুলো এই ধরনের অর্থ লেনদেনের সাহস পায় কোত্থেকে? বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী যতই ব্যবস্থা নিক না কেন যদি অর্থায়ন বন্ধ করা না যায় তাহলে এক্ষেত্রে সফল হওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শুধু তদন্ত করা হবে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে- এই ধরনের আশ্বাসবাণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। যে সমস্ত ব্যাংক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্ষের মধ্যে ভূত আছে কিনা দেখতে হবে সেটিও। যে তিনটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এ ব্যাপারেও জোর তদন্ত চালিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হবে সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে এর কোনো বিকল্প নেই।এইচআর/পিআর
Advertisement