শুরুটা করেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। ১৮৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে যেমন শুরু দরকার ছিলো, ঠিক তেমন ঝড়ো ব্যাটিংই করেছিলেন এ আফগান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। পরে বাকি ছিলো দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ম্যাচটা শেষ করে আসা।
Advertisement
ঠিক সেই কাজটা করেছেন দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচয় দিয়েছেন নিজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পারদর্শীতার। খেলেছেন ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস। শেষ ওভারের আগে আউট হয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুশফিকের ইনিংসেই ১৮৫ রানের বিশাল লক্ষ্য ২ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে চিটাগং ভাইকিংস।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে থিসারা পেরেরা ২৬ বলে ৭৪ রানের ঝড়ে ১৮৪ রানের পাহাড়ে চড়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভড়কে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ৪১ বলে ৭৫ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন মুশফিকুর রহীম।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুর ঝড়টা আনেন শাহজাদ। মাত্র ২৭ বলে খেলেন ৪৫ রানের ইনিংস। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৬১ রান করে ফেলে চিটাগং। কিন্তু দলীয় ৭০ রানের মাথায় শাহজাদ আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় চিটাগং। কমতে থাকে রানরেট, বাড়তে থাকে রানের চাহিদা।
Advertisement
কিন্তু এতে ভড়কে যাননি মুশফিক। একপ্রান্তে পুরোপুরি আগলে রাখেন দলকে। নিজের প্রথম ১৩ বল থেকে করেছিলেন মাত্র ১১ রান। তখনই ইনিংসের ১৩তম ওভার করতে আসেন থিসারা পেরেরা। সে ওভারে ৩ চার ও ১ ছক্কার মারে মোট ২১ রান করেন মুশফিক।
সে ওভারের পর থেকেই মূলত বদলে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। প্রতি ওভারে একটি-দুইটি করে বাউন্ডারি মেরে রানের চাহিদাটা ঠিক রাখছিলেন মুশফিক। মাত্র ৩০ বলে তুলে নেন নিজের ফিফটি। ইনিংসের ১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বলেই ১৭ রান করে সমীকরণটা ৭ বলে ৭ রানে নিয়ে আসেন তিনি।
কিন্তু সে ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যাওয়ায় ম্যাচটা শেষ করা হয়নি তার। তবে অধিনায়কের অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেন রবি ফ্রাইলিংক। লিয়াম ডসনের করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরেই নিশ্চিত করেন দলের তৃতীয় জয়।
এর আগে কুমিল্লার শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা যেখানে রান করতে বেগ পাচ্ছিলেন, সেখানে ১৪তম ওভারে আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে রীতিমতো টর্ণেডো বইয়ে দিয়েছেন পেরেরা। মাত্র ২৬ বলে খেলেছেন ৭৪ রানের ইনিংস, ৩টি চারের সঙ্গে হাঁকিয়েছেন ৮টি বিশাল ছক্কা।
Advertisement
পেরেরার এই ঝড়ো ইনিংসেই মূলত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছে কুমিল্লা। এছাড়া সাইফউদ্দীন অপরাজিত ছিলেন ২৬ রানে। চট্টগ্রাম ভাইকিংসকে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫ রান।
অথচ টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। ইনিংসের প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। বেশি কিছু করতে পারেননি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়ও।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে এভিন লুইসকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। দুজন মিলে যোগ করেন ৫৪ রান। কায়েস আউট হন ২১ বলে ২৪ রান। শুরুতে ধীর ব্যাটিং করা লুইস যখনই নিজের স্ট্রাইকরেট বাড়াতে যাবেন, তখনই পড়ে যান ইনজুরিতে।
পায়ের পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়ার আগে ৬টি চারের মারে ৩৪ বলে ৩৮ রান করেন লুইস। এরপর অল্পেই ফিরে যান লিয়াম ডসন এবং শহীদ আফ্রিদি। দুজনই করেন ২ রান করে।
১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটে আসেন পেরেরা, সঙ্গী হিসেবে পান মোহাম্মদ সাইফউদ্দীনকে। বাকি থাকা ৪০ বলের মধ্যে ২৬টিই খেলেন পেরেরা, যার পূর্ণ ফায়দা পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই ঝড় তোলার আভাস দেয়া পেরেরা সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী হন ইনিংসের ১৯তম ওভারে। এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে বল-ব্যাট উভয়দিকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা রবি ফ্রাইলিংকের করা ওভারে ১টি দুই ও ১টি চারের সঙ্গে ৪টি বিশাল ছক্কার মারে ৩০ রান করেন পেরেরা।
মাত্র ২০ বলে পূরণ করেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের ৭ম হাফসেঞ্চুরি। পেরেরার দেখাদেখি ১০৩ মিটারের বিশাল এক ছক্কা মারেন সাইফউদ্দীনও। শেষপর্যন্ত ২৬ বলে ৭৪ রানে পেরেরা এবং ১৯ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফউদ্দীন।
এসএএস/জেডএ