লক্ষ্যটা ছিলো মাত্র ১৩৬ রানের। তারকাখচিত রংপুর রাইডার্স ব্যাটিং লাইনআপের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সে ম্যাচেই অসাধারণ বোলিং করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৫ রানে হারিয়ে দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস।
Advertisement
যে জয়ের বেশিরভাগ কৃতিত্বই যাবে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের নামে। ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও, নিজের ৪ ওভার থেকে মাত্র ১৭ রান খরচ করেছেন মোস্তাফিজ। এটুকুতে বোঝার উপায় নেই কাটার মাস্টার ‘দ্য ফিজ’ এর কৃতিত্ব।
শেষ ওভারে রংপুরের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ৯ রান। মারকাটারি টি-টোয়েন্টির যুগে এ রান বিশেষ কিছু নয়। তার উপরে স্ট্রাইকে তখন চলতি আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রিলে রুশো। বোলিংয়ের দায়িত্ব বর্তায় মোস্তাফিজের কাঁধে। যিনি ১৮তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে জমিয়ে তোলেন ম্যাচ।
শেষ ওভারে তিনি ছাড়িয়ে যান ১৮তম ওভারটিকেও। ফুল লেন্থের বল ভালো খেলেন বুঝতে পেরে রুশোকে ওভারের প্রথম বলটা শর্ট লেন্থে করেন মোস্তাফিজ। দেখেশুনে পুল করলেও সেটি সরাসরি চলে যায় ফিল্ডারের হাতে, এক রান নিয়ে স্ট্রাইক ছাড়েন রুশো। এরই সাথে যেনো ম্যাচটিও ছুটে যায় রংপুরের হাত থেকে। পাঁচ বলে তখন প্রয়োজন ৮ রান।
Advertisement
রুশো আবার যখন শেষ বলে স্ট্রাইকে আসেন তখন রংপুরের লক্ষ্যটা ছিলো ১ বলে ৭ রান। অর্থাৎ মাঝের ৪ বল থেকে মাত্র ১ রান দেন মোস্তাফিজ, সেটিও বাই রানের সুত্রে। স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান ফরহাদ রেজা মোস্তাফিজের টানা ৪টি কাটারের ১টিও ব্যাটে লাগাতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত না পেরে ওভারের পঞ্চম বলে বাই রান নিয়ে স্ট্রাইকে আসেন রুশো, তখন জয় পাওয়া অসম্ভব। টাই করে সুপার ওভারে যেতে হলেও হাঁকাতে হবে ছক্কা। সামনে তখন দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা মোস্তাফিজ।
শেষ বলে অসাধারণ দক্ষতায় ব্লক হোলে বোলিং করেন মোস্তাফিজ। যে বল থেকে মাত্র ১ রান নিতে সক্ষম হন রুশো। তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৪ রান করে, মোস্তাফিজ রাজশাহীর হয়ে ম্যাচ জিতে নেন ৫ রানের ব্যবধানে।
অসামান্য দক্ষতায় ম্যাচ জিতিয়ে আনার ওভারে যখন মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেয়া হয়, তখন উইকেটের পাশেই তাকে ঘিরে বেশ কয়েকবার ছোট ছোট আলোচনা সেরে নেন অধিনায়ক মিরাজ, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ হাফিজরা। কী বলা হচ্ছিলো সে আলোচনায়? কী পরামর্শ দেয়া হয়েছিল মোস্তাফিজকে?
Advertisement
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মেহেদি মিরাজ জানিয়েছেন নিজ দলের সেরা অস্ত্রকে শেষ ওভারে ‘নির্ভার’ থাকার পরামর্শই দিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজ যেভাবে ভালো বোঝেন সেটাই করতে বলেন মিরাজ।
সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, ‘মোস্তাফিজকে আমি একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছি যে আমার কথা, সৌম্য ভাইয়ের কথা কিংবা হাফিজ ভাইয়ের কথাও শোনার দরকার নেই! ও যদি নিজের পরিকল্পনায় ভালো বোলিং করতে পারে তবে সেভাবেই ভালো করুক। তিনজনের কথা যখন মাথায় নেবে নিজেরটা করতে পারবে না। বলেছি তুই ফিল্ড সেটআপ করে, তোর মতো বোলিং কর।’
এসময় মিরাজ আরো জানান যে তিনি এবং সৌম্য মিলে মোস্তাফিজকে নির্ভার থাকার পরামর্শ দিলেও, হাফিজ এসে দিচ্ছিলেন ভিন্ন কিছু বুদ্ধি। কিন্তু তখন মিরাজ সাফ জানিয়ে দেন মোস্তাফিজ যেনো নিজের বুদ্ধিতেই বোলিং করেন। সে কাজ করেই সফলও হন বাঁহাতি কাটার মাস্টার।
‘সৌম্য ভাইও আমার মতো একই কথা বলেছে। কিন্তু হাফিজ ভাই বিভিন্ন রকম কথা বলতেছিল। আমি আর সৌম্য ভাই বলছিলাম না, তুই তোর মতো কর। ও নিজের মতো বোলিং করলে ভালো করে। আমরা ওকে ওর মতো বোলিং করতে সহায়তা করেছি এ কারণে ম্যাচটা জিততে পেরেছি। জানি মোস্তাফিজ কী ধরনের বোলার আর কী ধরনের মানুষ।’ - বলেন মিরাজ।
এসএএস/জেআইএম